রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: আরএসএসের মুখপত্রে বিচারপতিদের সমালোচনা করলেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আরএসএসের মুখপত্র স্বস্তিকা পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে হাই কোর্টে বিচারপতির দায়িত্ব পালনের সময়কালে নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি বিচারপতিদের ভূমিকার সমালোচনাও শোনা গেল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখে। এক প্রশ্নের উত্তরে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিচারবিভাগ ঔপনিবেশিক মানসিকতা হতে মুক্ত নয়। পরিতাপের বিষয় হলেও এটা সত্যি যে কতিপয় বিচারপতি হয়তো নিজেদের ‘ব্রাউন সাহেব’ মনে করেন। সাধারণ মানুষকে লিগ্যাল রিলিফ বা ন্যায়বিচার দিতে তাদের সেভাবে তৎপর হতে দেখা যায় না। গরিবদের মামলার বিষয়ে তারা ভাবিত নন।’’
সংঘের মুখপত্রে বিস্ফোরক প্রাক্তন বিচারপতির আরও বক্তব্য, ‘‘কোনও মামলায় একশো পৃষ্ঠার রায় দেওয়াটা কোনও বিচারকের কৃতিত্ব হতে পারে না। অন্যায়ের শিকার সাধারণ মানুষকে দ্রুত ন্যায়বিচার দানই হওয়া উচিত বিচারপতিদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। গজদন্তমিনারে বসে থাকার পরিবর্তে বিচারকদের লক্ষ্য হওয়া উচিত বেশি সংখ্যক মামলার নিষ্পত্তি।’’ আরএসএসের মুখপত্র স্বস্তিকার ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সংখ্যায় এক দীর্ধ সাক্ষাৎকারে বিচার প্রক্রিয়া ও বিচারপতিদের সম্পর্কে বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সময় দেখেছি যে বিভিন্ন আদালতে পড়ে থাকা মামলার তালিকা খুবই দীর্ঘ। ধনী ব্যক্তিরা বড় বড় কাউন্সেল দাঁড় করিয়ে তাদের মামলা করিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যান, কিন্তু গরিব লোকজনের দায়ের করা মামলা পড়ে থাকে। তাদের মামলা শোনার কথা বিচারপতিরা ভাবেন না। অথচ সেই মামলাটির উপর হয়তো আবেদনকারীর জীবন-মৃত্যু নির্ভর করছে।’’
এ প্রসঙ্গেই হাই কোর্টে থাকাকালীন নিজের এজলাসের বিষয় উল্লেখ করে তাঁর দাবি, তাঁর এজলাসে যে মামলার লিস্ট ছিল, সেটাকে তিন ভাগে ভাগ করেছিলেন। এর ফলে সেই লিস্টের মাঝের বা শেষের দিকে নাম থাকা আবেদনকারীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা পর্বের অবসান ঘটে। প্রাক্তন বিচারপতির কথায়, ‘‘দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন সম্ভব নয়, কিন্তু দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই সম্ভব। বিচারবিভাগ হোক বা প্রশাসন, দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে সৎ ও আপসহীন হলে প্রতিটি আইনের প্রকৃত প্রয়োগ সম্ভব।’’ সংঘের মুখপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাই কোর্টের বর্তমান দুই স্থায়ী বিচারপতির সমালোচনাও করেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, বর্তমানে কর্মরত ওই দুই স্থায়ী বিচারপতি তাদের কর্মজীবনে ভয়ানক গর্হিত কিছু কাজ করেছিলেন তাঁর মনে হয়েছে।