বিশেষ সংবাদদাতা: এবার নেপালেও (Nepal) কেন্দ্রের না! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠমান্ডু সফরের অনুমতি দিল না কেন্দ্রীয় সরকার। নবান্নে চিঠি দিয়ে একথা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। শুক্রবার সরকারি সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা চিঠি লিখে কাঠমান্ডুতে নেপালি কংগ্রেসের বিশেষ আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও সেন্ট্রাল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে।
বিদেশ থেকে রীতিমতো বড় আমন্ত্রণ। ১০-১২ ডিসেম্বর সেই কর্মসূচি ছিল। দীর্ঘ চিঠিতে নেপালি কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মমতার (CM Mamata Banerjee) ভূয়সী প্রশংসা করেন। পড়শি দেশের প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে এমন আমন্ত্রণ পেয়ে সম্মানিত বোধ করেন মমতা। সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যের তরফ থেকে বিষয়টি জানানো হয়। নেপাল যেহেতু ভারতের পড়শি, সেই কারণে বিদেশমন্ত্রক কী বলে সেদিকে নজর ছিল রাজ্যের। যদিও দীর্ঘ সময় উত্তর না পেয়ে সেই কর্মসূচি একরকম বাতিলই করে দিয়েছিলেন মমতা। এর মধ্যে শুক্রবার জানা গেল, ভারত সরকার চিঠি দিয়েছে নবান্নে। তারা মমতাকে কাঠমান্ডু যেতে বারণ করেছে।
[আরও পড়ুন: ভেঙে পড়ে বিমান, মেলে না খোঁজ! আজও রহস্যময় ওড়িশার ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল’]
সূত্র জানাচ্ছে, রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রণ সম্পর্কে কেন্দ্রের কিছু প্রশ্ন ছিল। রাজ্য তৎক্ষণাৎ তার ব্যাখ্যাও দেয়। কিন্তু কাঠমান্ডুতে নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ কারণে কেন্দ্র ছাড়পত্র দেয়নি। কিন্তু বাস্তবে যা দাঁড়াল তা হল, ফের বিদেশ সফরে মমতাকে আমন্ত্রণ নাকচ করল ভারত সরকার। কিছু দিন আগে রোমে (Rome) আন্তর্জাতিক ধর্মসভায় বক্তব্য রাখার জন্য মমতাকে আমন্ত্রণ করা হয়। যেখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল পোপ, জার্মান চ্যান্সেলরের মতো মানুষের। সেই সময় যুক্তি দেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রীর পদের সঙ্গে সমতুল নয় ওই অনুষ্ঠান। আগেও মমতা বারবার একইভাবে বিদেশ যেতে পারেননি। বেজিংয়ের বিমান ধরার প্রাক মুহূর্তে তাঁকে চিন না যেতে বার্তা দেয় বিদেশমন্ত্রক। তারও আগে আমেরিকা যাওয়ার আমন্ত্রণ পান।
কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই অনুষ্ঠানটিই বাতিল হয়। অক্সফোর্ডে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণও বাধার কারণে যেতে পারেননি মমতা। সেই তালিকায় যুক্ত হল নেপাল। তবে নেপাল পর্বে বাধাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে তৃণমূল শিবির। কেউ কোনও মন্তব্য না করলেও তারা মনে করছে, এর ফলে একদিকে যেমন মমতাকে ঠেকাতে কেন্দ্রের মনোভাব আবার স্পষ্ট হল, তেমনই আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর গুরুত্ব কতটা বেড়েছে তা প্রমাণিত। বাংলায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর দেশের রাজনীতিতে ছাপ ফেলেছে তৃণমূল। রাজ্যে রাজ্যে তৃণমূলের (TMC) সংগঠন তৈরি হচ্ছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিজে হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) বিরুদ্ধ মুখ। ঠিক সেই সময় প্রতিবেশী নেপালের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ মমতার অবস্থানকে আরও ইতিবাচক করে তুলল।
অভিযোগ ছিল, আন্তর্জাতিক স্তরে মমতার গুরুত্ব বাড়ুক তা চায় না শাসকদল বিজেপি (BJP)। সেই জন্য ইদানীং তাঁর বিদেশ সফরকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। সেই অভিযোগ এই নেপাল পর্ব থেকে আরও জোরালো হল। শুক্রবার রাতে মুখরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রে বলা হচ্ছে, নেপাল কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে বিজেপি-সহ সব দলই আমন্ত্রিত। নেপালে যেতে ভিসা লাগে না। বেসরকারি সফরে কেন্দ্রের অনুমতিরও প্রয়োজন নেই।