মৃদুল ঘোষ: লকডাউনের সময়ে মুরগিতেই আস্থা সকলের। করোনা ভাইরাসের জেরে মুরগির থেকে যতটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল মানুষ এখন ততটাই ভালবাসা দেখাচ্ছেন এই দু পেয়েকে। শীতের সময় থেকে করোনা ত্রাসে শিকেয় উঠেছিল মুরগির মাংস খাওয়া। গুজবের জেরে জেরবার হয়েছিলেন তাই মুরগি প্রেমীরা। মুরগির মাংস থেকেই করোনার সংক্রমণ হতে পারে, এই গুজবে কান না দিয়ে আপাতত লকডাউনের লম্বা ছুটিতে মাংসের রকমারি পদে মন দিয়েছেন সকলেই।
করোনা ত্রাসে আর ‘মুরগি’ হচ্ছে না মুরগিরা। চিনে করোনার প্রকোপ যখন সর্বাধিক তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য ছড়ানো হয় মুরগির মাংস নিয়ে। আর তা দেখেই রান্না ঘরে মুরগির প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সকল গেরস্থই। ফলে হু হু করে বিক্রি কমে নিরীহ পক্ষীটির।অভিযোগের বাউন্সারে মার্চের শুরুতে তলানিতে পৌঁছয় মুরগির দর। সাইড এফেক্টে তিন টাকায় নেমে আসে পোলট্রির ডিমের দরও। প্রাক করোনা ইনিংসে ১০০ টাকায় বিকোচ্ছিল তিনটি মুরগি। গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে অভয় বার্তা, ‘আমি করোনা ছড়াই না।’ তাতেও মন ওঠেনি সংশয়ী গেরস্থের। রান্নাঘরে ব্রাত্য থেকেছে ওরা। গিন্নির গঞ্জনার ভয়ে ইচ্ছে থাকলেও সস্তা মুরগি ঘরে তোলেননি কর্তা। প্রতি কিলো দর নেমেছিল ৬৫ টাকায়। কোথাও আরও কম। ঝাঁপ গুটিয়ে দিনের শেষে পকেটে হা-পিত্যেশ জমিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বিক্রেতা। কোথাওয় বা মুরগির সঙ্গে এক কিলো করে পেঁয়াজও বিনামূল্যে দিতে দেখা গেছে। মুরগির মাংস থেকে করোনার সংক্রমণ ছড়ায় না প্রমাণ করতে অন্য রাজ্যগুলিতেও মুরগির রকমারি পদ বানিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়। কোথায় বিক্রি কমে যাওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটিয়েছেন বিক্রেতারা। তবে করোনার আতঙ্ক যেমন প্রকোপ ফেলেছিল মুরগির মাংসের ওপরে তেমনই করোনার সংক্রমণের আতঙ্কে জারি হওয়া লকডাউন চাহিদা বাড়িয়ে তোলে মাংসের। রবিবার শহরের বাজারে কাটা মুরগি বিকিয়েছে ১৬০ থেকে কিলো প্রতি ২১০ টাকা পর্যন্ত। গোটা মুরগি বেড়ে ১৪০, ডিম ছ’টাকা। দমদম, শ্যামবাজার, হাতিবাগান বাজার, কোলে মার্কেট, মানিকতলা বাজার। লেক মার্কেট বা গড়িয়া বাজার—সবখানেই চড়ছে দর। লকডাউনের প্রভাবে যেহেতু মাছের আকাল বাজারে ফলে আমিষ খাবার বলতে মুরগির মাংসকেই বেছে নিচ্ছেন আম জনতা। তবে বাজারে মুরগির মাংস বিক্রি হলেও শহরের অলিগলিতে থাকা মুরগির দোকানগুলিতে এখনও তালাই ঝুলছে।
[আরও পড়ুন:লকডাউনে দুস্থদের ত্রাতা ‘কাশ্মীরি দাদা’, বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী]
তবে শুধুমাত্র করোনা নয়। কোনও নতুন রোগের দেখা মিললেই সবার প্রথমে কোপ পড়ে এই নিরীহ প্রাণীটির ওপরেই। বার্ড ফ্লু-র সময় সংক্রমণ রুখতে প্রচুর মুরগি মেরে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। সেই উদাহরণ টেনে অনেকেই মুরগির সংক্রামক তকমা বিশ্বাস করেন সহজে। অন্যদিকে মুরগির ব্যবসায়ীরা জানান, ৪৫ দিনের মধ্যে মুরগি বিক্রি করতে না পারলেই ক্ষতি হয় ব্যবসায়। কারণ তখন মুরগিগুলো রুগ্ন হয়ে মারা যায়। তাই কম দাম হলেও তারা বিক্রি করতে বাধ্য হন।
[আরও পড়ুন:‘চা খেতে এসেছি, আড্ডা দিতে নয়’ বলা দায়িত্বজ্ঞানহীনদের সবক শেখালেন অভিনেত্রী মধুমিতা]
The post লকডাউনে ঘুচল সংক্রমণের অপবাদ! ক্রমশ উর্ধ্বমুখী মুরগির মাংস appeared first on Sangbad Pratidin.
