বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই ভিন্ন পথে চলবে দুই রাজ্য। কেরলে কুস্তি হলেও বাংলায় দোস্তির পথেই হাঁটবে আলিমুদ্দিন। কেরল লবির সম্মতি আদায় করল বঙ্গ সিপিএম (CPM)। পলিটবুরোর বৈঠকে কংগ্রেসের (Congress) সঙ্গে জোট ইস্যুতে মালয়ালি নেতারা বাংলার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বলে AK গোপলন ভবন সূত্রে খবর। পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়বে বলে জানা গিয়েছে। সিপিএমের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেসও।
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ সিপিএমের পক্ষ থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রস্তাব খারিজ করে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নয়। রাজ্যের সব আসনেই যৌথ সভা করে বাম ও কংগ্রেস। একই মঞ্চে দেখা যায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাহুল গান্ধীকে। কিন্তু সেসময় বঙ্গ পার্টির আচরণে ক্ষোভ জানায় কেন্দ্রীয় কমিটি। বাংলার ভোটে পার্টিলাইন মানা হয়নি বলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের। ভোট শেষে কেরল লবির চাপে ‘আসন সমঝোতা’ বলে ব্যাখ্যা দেন আলিমুদ্দিনের ভোট ম্যানেজাররা। লালপার্টির নেতাদের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ হয় কংগ্রেসও। এর প্রভাব পড়ে লোকসভায়। রাজ্যের মাত্র ৪টি আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয় বামেদের। তার আগে অবশ্য হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে পার্টি লাইনে পরিবর্তন করিয়ে নেন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। কংগ্রেসকে নিয়ে নমনীয় অবস্থান নেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: প্রতিমা নিরঞ্জন নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ তৃণমূল ও বিজেপির, ফের উত্তপ্ত রাজারহাট]
বছর ঘুরেই রাজ্যে ফের ভোট (Assembly Election)। কেরলেও ভোট হবে একই সময়ে। এবার পার্টির অন্দরে বিতর্ক এড়াতে আগেভাগেই ‘মহাশক্তিমান সুপার সেক্রেটারি’ প্রকাশ কারাত ও তাঁর অনুগামী কেরল নেতাদের কার্যত ‘বগলদাবা’ করে ফেলল আলিমুদ্দিন। সোমবার সিপিএম পলিটবুরোর বৈঠকে (Politburo meeting) জোটের বিষয়টি তোলেন ইয়েচুরি। তিনি পরিস্থিতি বিবেচনা করার আবেদন রাখেন বলে সূত্রের খবর। বহু তর্কবিতর্কের পর কেরল লবির সমর্থন আদায় করেছে বঙ্গ সিপিএম। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য জানান, নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে যে এবার জোট অনিবার্য। এ ব্যাপারে বাংলার সিপিএম নেতৃত্বের তরফে পলিটবুরোর বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কেরল লবি সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করে।
বৈঠকে ঠিক হয়, কেরলে পার্টি কংগ্রেসের সঙ্গে কুস্তি করলেও বাংলার ভোটে দোস্তির হাত প্রসারিত করবেন বামপন্থী নেতারা। তবে এখানেই শেষ নয়। পার্টির অন্দরে বাম নেতাদের আরও লড়াই বাকি রয়েছে। পলিটবুরোর সিদ্ধান্তে আবার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে কেন্দ্রীয় কমিটি। ৩০ ও ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পলিটবুরোর সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দেবে বলে ধরে নিয়েই এগোচ্ছে আলিমুদ্দিন।
[আরও পড়ুন: উৎসবের মরশুমে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পথে পিঁয়াজ, মাথায় হাত আমবাঙালির]
বাংলায় বাম কংগ্রেস জোট নিয়ে পলিটবুরোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিধানভবন। দলের সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর সরকার জানান, জোটের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে ইতিমধ্যেই বাম নেতৃত্বের সঙ্গে দু’দফায় বৈঠক হয়েছে। আরও হবে। ২৯৪ টি আসনে রফা করতে দু’পক্ষ সহমত হয়েছে। এখন কে কোন আসনে প্রার্থী দেবে, তা চূড়ান্ত হওয়া বাকি। বছর শেষের আগেই সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।