বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: পালটে যাওয়া সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুখের ভাষাও বদলে ফেলছে সিপিএম (CPM)। লাল পতাকার মিছিলে হাঁটা সিপিএম কর্মীদের মুখে এবার শোনা যাবে যুগোপযোগী নতুন স্লোগান। একুশের লড়াইকে সামনে রেখে বাছাই করা শব্দের মোড়কে তৈরি হচ্ছে বামপন্থীদের স্লোগান।
বাংলার রাজনীতিতে চিরকাল স্লোগানের শব্দচয়ন ও ঝাঁঝ শুনে বাম ও দক্ষিণপন্থার অবস্থান নির্ণয় করা যেত। ‘সামনে লড়াই কমরেড/ গড়ে তোলো ব্যারিকেড’ কিংবা ‘লাল পতাকা দিচ্ছে হাঁক/ শ্রেণিশত্রু নিপাত যাক’-এর মতো ছ’য়ের দশকের বিপ্লবী স্লোগানগুলি সেভাবেই ছিল বামপন্থার সংগ্রাম ও সংঘর্ষমুখী প্রবণতার প্রতীক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কানে বাজতে থাকা এই স্লোগানগুলিও যে কার্যকারিতা হারিয়েছে, তা আজকে সময়ে দাঁড়িয়ে বেশ বুঝতে পারছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। মোবাইল, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার দাপাদাপিতে যে আমূল পালটে গিয়েছে আমজনতার মনোজগত, বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না তাও। বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে মানানসই হতে অবশেষে তাই আজ নিজেকে বদলে নেওয়ায় জোর দিয়েছে সিপিএম।
[আরও পড়ুন: বাড়ির দরজায় বিনামূল্যে কোভিড টেস্টের সুবিধা, দেশের মধ্যে প্রথম শুরু হচ্ছে কলকাতায়]
পুরনো স্লোগান (Slogan) পিছনে ফেলে রাজ্যের বাম নেতৃত্ব এগোতে চাইছে আধুনি সময়ের পথে। সেই পথের দাবিতেই বদল আসছে স্লোগানেও। আলিমুদ্দিনের অন্দরমহলের আলাপ-আলোচনা থেকে জানা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে রাজ্যের কমরেডদের মুখে শোনা যেতে পারে একগুচ্ছ নতুন স্লোগান। কেমন সেসব স্লোগান? উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতেই পারে, ‘দরকারে পাই, তাই সরকারে চাই’ অথবা ‘কেউ খাবে কেউ খাবে না/ তা হবে না তা হবে না’ – এরকম সব স্লোগান। মূলত যুব ভোটারদের আকর্ষণ করতেই এই স্লোগান তুলে প্রচারে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে লাল পার্টি। সঙ্গে বুথভিত্তিক দায়িত্ব বন্টনের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে পার্টির তরফে। সূচিমতো পুরভোটের নির্ঘন্ট পার হয়ে গিয়েছে। করোনা কালে মুলতুবি থাকলেও যে কোনও সময়ই তার দামামা বেজে উঠতে পারে।
এদিকে, বছর ঘুরলেই বাংলায় বিধানসভা ভোট। হাতে বেশি সময় নেই। সেসব কথা ভেবেই সময় থাকতে থাকতেই আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছেন আলিমুদ্দিনের ভোট ম্যানেজাররা। যে প্রস্তুতিপর্বের অন্যতম বিষয়, ভোটের সময় মানুষের কাছে নতুন সাজে দলকে হাজির করা। তা সে প্রার্থী তালিকাই হোক বা স্লোগান। এবারে ভোটার তালিকার ৬০ শতাংশের বেশি ভোটারের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এই ভোটারদের কথা মাথায় রেখে তৃণমূল ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে। ছাত্র-যুব ভোটারদের মন জয় করতে ‘যুবশক্তি’-এর মতো মঞ্চ গঠন করেছেন যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মঞ্চের ভারচুয়াল সভাও করেছেন তিনি। বামেরা এইরকম মঞ্চের কথা না ভাবলেও কমবয়সী ভোটারদের মন জয় করতে পার্টিকে আধুনিক মোড়ক দেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র-বিমান বসুরা।
[আরও পড়ুন: ছাড়পত্র দেয়নি প্রশাসন, শেষে হাই কোর্টের অনুমতি নিয়ে সল্টলেকে গণেশ পুজো সব্যসাচী দত্তর]
বছর দুই আগে থেকেই পার্টির ছাত্র ও যুবরা স্লোগানে নতুনত্ব এনেছে। রাজ্যের শাসকদল ও বিজেপি দুই শিবিরেই সেসব স্লোগানের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছিল। মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছিল সেই স্লোগান। এবার ভোটের জন্য নতুন স্লোগান তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য কমিটির এক সদস্য জানান, প্রার্থী তালিকাতেও নতুনত্ব থাকবে। সিংহভাগ প্রার্থীই হবে নবীনরা। এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে প্রার্থী খোঁজার কাজ চলছে।
The post সাবেকি স্বর বাদ, একুশের আগে যুবসমাজকে কাছে টানতে নতুন স্লোগানে শান দিচ্ছে সিপিএম appeared first on Sangbad Pratidin.