অর্ণব আইচ: প্রাক্তন আইএএস (IAS) আধিকারিকের সই জাল করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার অভিযোগ। প্রাক্তন প্রশাসনিক কর্তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তছরূপ। জোড়া জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার এক বৃদ্ধ। হাতের লেখা বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেই নিউ আলিপুর (New Alipore) থানার পুলিশ তাকে জালে আনে। ধৃতের নাম মধুসূদন ধর। বয়স ৭৪ বছর।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত মধুসূদন ধর নামে ওই ব্যক্তির নিউ আলিপুর এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যাতায়াত ছিল। প্রাক্তন আইএএস নলিনী চক্রবর্তীর অ্যাকাউন্ট ছিল ওই ব্যাংকেই। সেই সূত্রে দু’জনের আলাপ। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বও হয়ে যায়। পুলিশের দাবি, ২০১৫ সালে দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বের পর নলিনীবাবু তাঁর মেয়ের কাছে কানাডায় (Canada) চলে যান। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী মধুসূদনবাবুকে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি দেখভাল করতে বলেন। আর তাতেই ঘনায় বিপদ। ব্যাংক জালিয়াতিতে (Bank Fraud) নাম জড়ায় তাঁর।
[আরও পড়ুন: বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ, এবার ৬ শিক্ষকের চাকরি বাতিল করল কলকাতা হাই কোর্ট]
নলিনীবাবুর কানাডাবাসীর মেয়ের অভিযোগ অনুযায়ী, বাবা বিদেশে থাকার সময়ই ‘বন্ধু’ মধুসূদনবাবু তাঁর সই ও নথি জাল করে, নলিনীবাবুর নামেই ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। এছাড়াও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন সময় জালিয়াতি করে আরও প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা তুলে নেন অভিযুক্ত। ২০১৮ সালে মৃত্যু হয় ওই প্রাক্তন IAS নলিনী চক্রবর্তীর। কিন্তু ঋণের টাকা ততদিনে ফেরত দেওয়া হয়নি। ফলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে একাধিকবার নলিনী চক্রবর্তীর নামে চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠিতে ঋণ নেওয়ার তারিখ দেখেই তিনি হতবাক হয়ে যান। কারণ, ওই সময়ের জন্য তাঁর বাবা তাঁর কাছে কানাডায় ছিলেন। ফলে তাঁর ঋণ নেওয়ার কোনও সুযোগই ছিল না। আর এই ব্যাপারে তাঁর বাবা কিছু বলেও যাননি।
[আরও পড়ুন: নিম্নমুখী দেশের কোভিড গ্রাফ, সংক্রমণ কমলেও চিন্তায় রাখছে মৃত্যুর হার]
এরপর খোঁজখবর করে কানাডাবাসী ওই মহিলা বাবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাও তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। যে সই দিয়ে প্রাক্তন প্রশাসনিক কর্তার ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়, সেগুলি হাতের লেখা বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়। তাঁরা খতিয়ে দেখে জানান, সইগুলি সবই জাল। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ ব্যাংকে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। ব্যাংকের সিসিটিভির ফুটেজ (CCTV Footage) পুলিশ পরীক্ষা করেও দেখে। যেহেতু মধুসূদন ধর ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলির দেখভাল করতেন, তাঁর উপরই এসে পড়ে সন্দেহের তির। পুলিশ তাঁকে জেরা করে। তার ভিত্তিতেই অভিযোগের তিন বছর পর পুলিশ বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করে। ওই জালিয়াতির সঙ্গে অন্য কেউ যুক্ত কি না, তা জানতে ওই বৃদ্ধকে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।