গোবিন্দ রায়: স্ত্রী বাড়িতে থাকছেন না। এদিকে স্ত্রীর পরিবারের সদস্য বা বন্ধুরা একটা নির্দিষ্ট সময় পরও ওই বাড়িতে রয়েছেন। স্বামীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটলে, তা হবে অত্যাচারের সমান। এমনই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাই কোর্টের। এক ব্যক্তির আনা বিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর বাড়িতে স্ত্রীর পরিচিত লোকজন থাকা বৈবাহিক নিষ্ঠুরতার সামিল হতে পারে। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ এই কথাও জানিয়েছে।
জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে নবদ্বীপে বিয়ে হয়েছিল ওই ব্যক্তির। তবে বিয়ের তিন বছরের মধ্যেই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন তিনি। অভিযোগ ছিল, শ্বশুরবাড়ির সদস্য, বন্ধুরা দীর্ঘদিন তাঁর বাড়িতে থাকছেন। তিনি আদালতে জানান, বিয়ের এক বছর পর কোলাঘাটে থাকতে শুরু করেন দম্পতি। অফিসের জন্য ২০০৮ সালে কলকাতার নারকেলডাঙায় স্ত্রী থাকতে শুরু করেন। যদিও ওই ব্যক্তি কোলাঘাটেই থেকে যান। অভিযোগ, স্ত্রী চলে যাওয়ার পর শাশুড়ি ও বন্ধুরা তাঁর কোলাঘাটের কোয়ার্টারেই থাকতে শুরু করেন। স্ত্রী সেখানে ফিরে যেতে চাননি। এদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ফিরে যেতে চাইছিলেন না। এদিকে, স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে নবদ্বীপ থানায় গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ সহ একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন। মায়ের পেনশন এবং তাঁর নিজের বেতনের ভাগ নেওয়ার জন্য চাপ দিতেন স্বামী। তাই তিনি একা যেতেন না কোলাঘাটে। এমন অভিযোগ করেন ওই মহিলা। যদিও এই অভিযোগ ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এদিন হাই কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, স্বামীর বাড়িতে তাঁর অনিচ্ছাসত্ত্বেও স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে শ্বশুরবাড়ি লোকজন দীর্ঘদিন থাকতে পারবেন না। এতে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হয়। এদিকে স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালতের বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তিন বছর একসঙ্গে থাকার সময় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এখন দীর্ঘ সময় আলাদা থাকার পর এই ধরনের গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ করা হচ্ছে। যার ভিত্তি নেই।
স্বামীর দাবি ছিল, স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ক কিংবা সন্তান নেওয়াতে কোনও আগ্রহ ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা করে মানহানির চেষ্টা হয়েছে। প্রথমে নিম্ন আদালতে এই মামলা উঠলে বিচারক ব্যক্তির আর্জি খারিজ করে দেন। নিম্ন আদালতের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। হাই কোর্ট নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে আবেদনকারীর বিচ্ছেদের আবেদন গ্রহণ করেছে। তাঁর পক্ষেই মত দিয়েছে।