রমেন দাস: ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে মুখে 'শান্তিপূর্ণ আন্দোলন'-এর কথা বলছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। বলছেন, ''যেখানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হবে না, সেখানে আইএসএফ নেই।'' কিন্তু বাস্তবে ওয়াকফ প্রতিবাদের ছবিটা মোটেই তেমন নয়। মুর্শিদাবাদের অশান্তি আপাতত থেমেছে। নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। সোমবার কলকাতায় দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসার পথে পুলিশি বাধা পেয়ে পালটা হিংসাত্মক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন আইএসএফ কর্মীরা। বাসন্তী হাইওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকারী রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করেন। তাতে চরম সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষজন। তাতেই প্রশ্ন উঠছে, দলের বিধায়কের কথাই শুনছেন না কেউ, কীভাবে শান্তি বজায় থাকবে?

সোমবার শিয়ালদহের রামলীলা ময়দানে নয়া ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী কর্মসূচি ছিল আইএসএফের। সেখানে যাওয়ার পথে ভাঙড়ের কাছে বাসন্তী হাইওয়েতে তাঁদের মিছিল আটকায় পুলিশ। আইএসএফ কর্মীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে পুলিশের। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতেই পুলিশের লাঠিচার্জ শুরু হয়। তাতে কয়েকজনের মাথা ফেটে যায় বলে অভিযোগ। এরপরই বাসন্তী হাইওয়েতে চরম ধুন্ধুমার শুরু হয়। পুলিশের 'নির্যাতন'-এর অভিযোগে তাঁরা গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করেন। আটকে পড়ে গাড়ি, চরম সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ।
নওশাদের সভায় ভিড় আইএসএফ কর্মী, সমর্থকদের। ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু।
আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ যখন শিয়ালদহে সভা শুরু করেন, তখন দুপুর ৩টে বেজে গিয়েছে। তখনও ভাঙড় থেকে দলের কর্মী, সমর্থকরা পৌঁছতে পারেননি। এই সভা থেকে নওশাদ বলেন, ''মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এরাজ্যে নতুন ওয়াকফ আইন লাগু হবে না।আমরাও তো চাই, লাগু না হোক। তাই জন্য আমরা শিয়ালদহে সমাবেশের আয়োজন করেছি। তাহলে সেখানে যেতে কর্মীদের বাধা দিল কেন পুলিশ? শুধু কি তৃণমূলই এ রাজ্যে কর্মসূচি করবে? ভাঙড় থেকে আমাদের ভাইয়েরা এখনও পৌঁছয়নি। আমরা বলেছি, ওখানেই একটা সভার ব্যবস্থা করতে।''
ওয়াকফ প্রতিবাদ নিয়ে এরপর নওশাদের বক্তব্য, ''সংশোধনীর নামে কেন্দ্র সরকার আমাদের মা-বোনদের বিপদে ফেলেছে। ভুল বোঝানো হচ্ছে যে মুসলিমরা এর প্রতিবাদে নেমেছে। আমি বলছি, এটা কোনও ধর্মীয় কারণে প্রতিবাদ নয়, এটা একটা আর্থ সামাজিক বিষয়। কৃষক বিলের প্রতিবাদে যেমন গোটা দেশের কৃষক সমাজ পথে নেমেছিল, কেন্দ্র আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। এখানে আমাদেরও তেমনই করতে হবে। আজ মুসলিমদের সম্পত্তি নিয়ে এই আইন করছে, কাল হিন্দু, ক্রিস্টান, শিখদের সম্পত্তি নিয়েও হবে। তা আমাদের রুখতে হবে। তবে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে হবে আমাদের। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন না হলে সেখানে আইএসএফ নেই।'' কিন্তু এরপরও বিকেলে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়। সবমিলিয়ে ওয়াকফ ইস্যুতে যে অগ্নিগর্ভ ছবি দেখা যাচ্ছে, তা আর যাই হোক, মোটেই 'শান্তিপূর্ণ' নয়।
ভাঙড়ের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। নিজস্ব ছবি।