shono
Advertisement

Swapnadip Kundu Death: ‘চারদিক রক্তাক্ত! পড়ে আছে নগ্ন স্বপ্নদীপ’, ভয়াবহ রাতের কথা জানালেন ‘প্রথম’ প্রত্যক্ষদর্শী

'চিৎকারের পরেই আচমকা নিচে পড়ল স্বপ্নদীপ', তারপর...
Posted: 04:13 PM Aug 12, 2023Updated: 10:34 PM Aug 12, 2023

রমেন দাস: স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। নদিয়ার বগুলার সাধারণ এই ছেলেটির নামই ছড়িয়েছে সর্বত্র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রের মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছে। র‍্যাগিং, খুন – নাকি স্বপ্নদীপের মৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও কারণ! তদন্ত শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু যাদবপুরের এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে দেশ জুড়ে। সন্তান হারানো বাবা-মায়ের আর্তনাদের মধ্যেই প্রত্যেক মুহূর্তে প্রকাশিত হচ্ছে একাধিক তথ্যও।

Advertisement

স্বপ্নদীপের (Swapnadip Kundu Death) বাবা অভিযোগ করছেন, খুন হয়েছেন তাঁর ছেলে। হস্টেলের (Jadavpur University Main Hostel) ব্যালকনি থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও করেছে মৃত ছাত্রের পরিবার।

কিন্তু সেদিন ঠিক কী হয়েছিল? এই প্রশ্ন এবং এর উত্তরের ধোঁয়াশার মধ্যেই উঠে এসেছে ‘রক্তাক্ত’ বুধবারের একাধিক কথাও। এমনই এক ‘প্রথম  প্রত্যক্ষদর্শী’র সঙ্গে কথা বলেছে ‘সংবাদ প্রতিদিন’। আশরাফুল ইসলাম (নাম পরিবর্তিত) নামের ওই যুবকের দাবি, ওই রাতে রক্তাক্ত স্বপ্নদীপকে প্রথম দেখেছিলেন তিনিই! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এই ছাত্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা ২০১৬ থেকে থাকতেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলে। প্রথমে এ ব্লক, তার পরের দু’বছর একই হস্টেলের বি ব্লকে থাকতেন ওই পড়ুয়া।

এখন অন্যত্র থাকলেও ওই গবেষকের দাবি, সেদিন অর্থাৎ বুধবার সন্ধেয় তাঁর এক আত্মীয়ের জন্য ওই হস্টেলে ফের গিয়েছিলেন তিনি। যে যাওয়াই ‘কাল’ হয় তাঁর জীবনে। প্রত্যক্ষদর্শী আশরাফুলের (নাম পরিবর্তিত) দাবি, ”আমি বুধবার আমার এক ভাইয়ের ভরতির কাজে ব্যস্ত ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়েই। ভাইকে প্রথমবর্ষে ভরতি করায়। তারপর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মেইন হস্টেলে যাই। সেখানেই ওই রাতে থাকার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ, অনেকেই চেনা ছিল ওখানে।”

[আরও পড়ুন: যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যু: কুকীর্তি ঢাকতেই নৃশংস খুন! স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে বিস্ফোরক বাবা]

কিন্তু হস্টেলের আবাসিক না হয়েও কেন সেখানে ছিলেন ওই গবেষক? যুবকের দাবি, ”আমরা প্রাক্তনী কিন্তু মেইন হস্টেলে বহু পরিচিত ভাইয়েরা রয়েছে। তাদের সঙ্গে এমন আড্ডা চলেই।” তারপর কী দেখলেন তিনি? যাদবপুরের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের (IR) ওই ছাত্রের দাবি, ”একটু রাত বাড়তেই কিছু অদ্ভূত আওয়াজ শুনতে পাই। কেমন যেন লাগছিল! কোনও সমস্যা হলে যেমন হয় আর কী! বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। বি ব্লকের নিচে নেমে এসে বাইরেই কথা বলতে শুরু করি। এমন সময় এ২ ব্লক থেকে কিছু অচেনা আওয়াজ শুনতে পাই। কৌতুহল বশত এগিয়ে গিয়ে জানার চেষ্টা করি কী হচ্ছে!”

এরপর ওই যুবক জানান, ”আমি সামনে থাকা একজনকে জিজ্ঞাসা করি, কী চলছে ওখানে। কিন্তু আমাকে বলা হয়, জিবি (সাধারণ সভার বৈঠক) মিটিং হচ্ছে! তবে যে শব্দ ও রাগারাগির আভাস পাচ্ছিলাম, তাতে কোথাও গিয়ে মনে হয়নি জিবি মিটিং হতে পারে! কারণ, আমিও বহু বছর এখানকার আবাসিক ছিলাম। জানি সেই মিটিং কেমন হয়! কিন্তু ওই ব্লকের উপরে উঠতে পারিনি। ইচ্ছা করেই আর খোঁজ নিইনি। এরপর আবার ফোনে কথা বলা শুরু করি।”

[আরও পড়ুন: সহপাঠিনীকে প্রেম নিবেদনে জোর! না পারায় স্বপ্নদীপকে ‘সমকামী’ বলে মশকরা]

ওই যুবক জানান, ”আমি উপর থেকে হঠাৎ কিছু পড়লে যেমন আওয়াজ হয়, এমন শুনতে পাই। পিছনে ফিরে দেখি উপর থেকে কেউ নিচে পড়ে আছে। মাথা ফাটা! ভয়ংকর অবস্থা! রক্তে ভেসে যাচ্ছে চাতাল! চমকে যাই কী করব! তখনও আমি নিচেই দাঁড়িয়ে। পরনের জামা খুলে ফেলি, তারপর ওই জামা ওর (স্বপ্নদীপ) মাথায় বাঁধার চেষ্টা করি। আমার চিৎকারে জড়ো হয় বাকিরা। তারপর স্বপ্নদীপকে ট্যাক্সিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় যাদবপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।”

কিন্তু স্বপ্নদীপের বাবা অভিযোগ করেছেন অনেকক্ষণ পড়ে থাকার পরেও হাসপাতালে নেওয়া হয়নি তাঁর ছেলেকে? এই প্রসঙ্গে ওই গবেষকের দাবি, ”আমি সেই মুহূর্তে হতভম্ব হয়ে যায়! যেটা স্বাভাবিক, সেই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ি আমিও। আমার পরিচিতরা আমাকে ঘরে নিয়ে আসেন। অসুস্থতা অনুভব করি। ওই রক্তাক্ত শরীরের কথা মনে পড়ছিল বারবার! এই ঘটনার পর আর সে রাতে ঘুম আসেনি আমার চোখে!”

হাসপাতালে গেলেন না? তিনি জানান, ”ওই পরিস্থিতিতে আমার মানসিক অবস্থা ঠিক কেমন হতে পারে, বুঝতে পারছেন! আমি বৃহস্পতিবার সকালে গিয়েছি হাসপাতালে। নিজের তরফে যা দেখেছি সবটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ডিন অফ স্টুডেন্টকে (Dean Of Students) বলেছি! ভুলতে পারছি না ওই রাতের কথা!”

কী মনে হয় আপনার? কী কারণে এই মৃত্যু হতে পারে! ওই প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ”আমি ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় বুঝতে পারিনি কেন, কী কারণে এমন হয়েছে। শুধু ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি! কিন্তু স্বপ্নদীপ যখন উপর থেকে পড়ে ওর পরনে একটি সুতোও ছিল না! ছেলেটি নগ্ন ছিল মনে আছে। সম্পূর্ণ নগ্ন ছিল স্বপ্নদীপের শরীর। সবাই ওর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে তখন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক! ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।”

মৃত স্বপ্নদীপ কুণ্ডু।

র‍্যাগিংয়ের প্রকোপ? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) ওই গবেষকের দাবি, ”দেখুন আমিও র‍্যাগিংয়ের (Stop Ragging) মুখোমুখি হয়েছি। তথাকথিত ইন্ট্রোর আড়ালে ভয়ানক অত্যাচার দেখেছি। তবে আমার সঙ্গে পারেনি ওরা। আমি কর্তৃপক্ষের সাহায্য পেয়েছি। অভিযোগও করেছিলাম। স্বপ্নদীপ কেন মারা গেল নিশ্চিত নই, কিন্তু ছেলেটি লড়তে পারল না কেন! এর বিচার হোক! ওর মৃত্যুর আসল কারণ প্রকাশ্যে আসুক।”

তাহলে এর বিচার চাইছেন আপনিও? তদন্তে সাহায্য করতে প্রস্তুত? ওই ছাত্রের জবাব, ”আর পারছি না! নিজেকেও চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। আর ওর কথা মনে করলেই বুকটা ফাটছে কষ্টে। তদন্তে সহযোগিতার কথা বলছেন! হ্যাঁ প্রস্তুত। আমি ভয় পাই না। আমার নাম প্রকাশ্যে আসলেও সত্যিটাই বলব। স্বপ্নদীপ খুন হয়েছে কিনা, এটা তো বলছি না। আমি যা দেখেছি সেদিন, তা বলব না কেন?”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement