অর্ণব আইচ: মাঝরাতে নিজাম প্যালেসে 'কালীঘাটের কাকু' (Kalighater Kaku)। সেখানেই রাত কাটল তাঁর। জোকা ইএসআই-তে স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে নিজেদের দপ্তরে নিয়ে আসে সিবিআই। সূত্রের খবর, সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসবাদ করছেন তদন্তকারীরা। উল্লেখ্য, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় মঙ্গলবার 'কালীঘাটের কাকু'কে জেল থেকে ‘গ্রেপ্তার দেখায়’ সিবিআই।
সোমবারই হাই কোর্ট সুজয়কৃষ্ণর আগাম জামিন নাকচ করেছিল। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে তাঁকে বিচারভবনে বিশেষ সিবিআই আদালতে ভারচুয়াল পদ্ধতিতে হাজির করা হয়। তখনই সিবিআই আদালত জানায়, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর আইনজীবী তাঁর জামিনের আবেদন জানান। জামিনের বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। দুপক্ষের বক্তব্য শুনে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে চারদিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। আদালতের নির্দেশ, প্রেসিডেন্সি জেলের হাসপাতাল থেকে সুজয়কৃষ্ণকে কেন্দ্রীয় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হবে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসার পর সিদ্ধান্ত নেবেন, তাঁকে ফের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে না কি তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেবে সিবিআই। আদালতের পর্ব মিটতেই রাত সাড়ে নটা নাগাদ কালীঘাটের কাকুকে নিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে পৌঁছয়। এর পর রাত প্রায় সোয়া বারোটা নাগাদ তাঁকে জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হুইল চেয়ারে চাপিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় নিজাম প্যালেসে।
উল্লেখ্য, এর আগে অসুস্থতার কারণে একাধিকবার আদালতে হাজিরা দিতে পারেননি সুজয়কৃষ্ণ। এদিন আদালতে বিচারক বলেন, ‘‘অভিযুক্ত যদি দিনের পর দিন না আসেন, তাহলে বিষয়টি তাঁর বিরুদ্ধেই যায়। সিবিআইয়ের এখানে কোনও ভূমিকা নেই। আদালত সব দেখছে, সব বোঝে। আমি দেখব, কীভাবে তাঁকে সশরীরে হাজির করানো যায়। সব ক্ষেত্রে টাইমলাইন ধরে জামিনের আবেদন করবেন না। কেজরিওয়ালের উদাহরণ সামনে আনবেন না। প্রত্যেকটি মামলার আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে।’’ এদিন আদালতে সুজয়কৃষ্ণর আইনজীবী আদালতে জানান, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। অথচ তাঁকে আটকে রাখতেই এখন সিবিআই গ্রেপ্তার করে হেফাজতে চাইছে। তদন্তের কারণে নয়, অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে সিবিআইয়ের।
২৫ নভেম্বর ইডি মামলায় হাই কোর্টে জামিনের আবেদনের শুনানির শেষের পরই জেল থেকে সিবিআই তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চায়। ৬৩ বছরের বৃদ্ধ সুজয়কৃষ্ণবাবু খুবই অসুস্থ। এর আগে তাঁর বাড়িতে সিবিআই অভিযান চালিয়েছে। জেরা করেছে। তাঁকে আগেও সিবিআই গ্রেপ্তার হতে পারত। ইডির হেফাজতে থাকার সময় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাইপাস অপারেশন হয়েছে। তাঁকে যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়ার আবেদন জানান আইনজীবী। আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবীর দাবি, তদন্তের প্রয়োজনে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। বাজেয়াপ্ত করা নথি খতিয়ে দেখে তাঁকে জেরার জন্য হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি ও অন্য অভিযুক্তরা অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তুলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তালিকা পাঠিয়ে তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা করেছেন বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের।