অর্ণব আইচ: ডেটিং অ্যাপে ছবি দেখে মেয়েটিকে বেশ পছন্দ হয়েছিল আদর্শ লোসালকার। এরপর মোবাইল নম্বর বিনিময়। কয়েকদিন ধরে দু'জনের মধ্যে চলে চ্যাট। আর তারপরই একটি হোটেলে ডেটিং বান্ধবীটিকে কাছে পেতে চান পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আদর্শ। রাজি হয় বান্ধবীটি। সেই অনুযায়ী হোটেলে দেখা। উদ্দাম যৌনতায় মাতে আদর্শ ও কোমল। তারপর কী এমন কারণে আদর্শকে খুনের মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে হল কোমল ও তার লিভ ইন পার্টনার ধ্রুবকে। শুধুমাত্র টাকাপয়সা নিয়ে বিবাদ নাকি অন্য কিছু - এখনও জারি রহস্যের জট। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ধৃত কোমল ও ধ্রুবকে জেরা করে সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে বলেই আশা তদন্তকারীদের।
জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার কোমলকে কসবার (Kasba Hotel Death Case) ওই হোটেলে আসতে বলেন আদর্শ। কোমল তাঁকে জানায়, তার সঙ্গী ধ্রুবও সঙ্গে থাকবে। তাই আদর্শ পাশাপাশি দু'টি রুম বুক করেন। শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আদর্শরা চেক ইন করেন। একটি রুমে আদর্শের সঙ্গে রাত কাটায় কোমল। অন্য রুমে ছিল ধ্রুব। আদর্শ ও কোমল মিলে বিয়ার খান। পুলিশ হোটেলের ওই রুমের মধ্যে থেকে একাধিক বিয়ারের ফাঁকা বোতল, কিছু আপত্তিকর বস্তু ও দু'টি গ্লাস উদ্ধার করে। বিবস্ত্র দেহের কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা ছিল আদর্শের জামাকাপড়। জানা গিয়েছে, বেশি রাতে কোমলের সঙ্গে মদ্যপ অবস্থায় যৌন সম্পর্কও হয় আদর্শের। কোমলদের দাবি, চাহিদামতো টাকা দিতে রাজি হননি আদর্শ। এরপরই কোমল পাশের ঘর থেকে ডেকে আনে ধ্রুবকে। দু'জন মিলে যুবকের কাছ থেকে টাকা কেড়ে নিতে চাইলে তিনি বাধা দেন। এরপরই দু'জনের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় আদর্শের। তারা তাঁর পা তোয়ালে দিয়ে বেঁধে ফেলে। ধস্তাধস্তির জেরে আদর্শ বিছানা থেকে মেঝেয় পড়ে যান। ওই অবস্থায় তাঁকে ধ্রুব ও কোমল শ্বাসরোধ করে খুন করে। মেঝেয় পড়ে যাওয়ার কারণে তাঁর মাথায় পিছনে চোট লাগে বলে ধৃতদের দাবি। যদিও চাহিদামতো টাকা না পেয়ে খুন, সরাসরি এই মোটিভ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পুলিশেরও।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, এমনও হতে পারে আদর্শর সঙ্গে ডেটিং অ্যাপে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই কোমল সাহা তার লিভ ইন পার্টনার ধ্রুবর সঙ্গে লুঠপাট ও তাতে বাধা পেলেই খুনের নিখুঁত ছক সাজায়। এমনকী, রাত কাটানোর শর্ত হিসাবে লিভ ইন পার্টনারকেও হোটেলের পাশের ঘরে রেখে দেয়। পুলিশের ধারণা, প্রচণ্ড মদ্যপ ও বিবস্ত্র অবস্থায় টাকা ও মোবাইল লুটে বাধা দিয়েছিলেন আদর্শ। তাই যুগল তথা দুই লিভ ইন পার্টনার মিলেই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে খুন করে আদর্শের মানিব্যাগ, দু'টি আই ফোন নিয়ে উধাও হয়ে যায় কোমল ও ধ্রুব। এমনকী, শনিবার ওই আই ফোন ব্যবহার করেই আদর্শের সোশাল মিডিয়ার যাবতীয় তথ্য তারা উড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। তাঁর এটিএম কার্ডের পিন নম্বর জেনে নিয়ে টাকা তোলার ছকও কষেছিল দু'জন। শ্বাসরোধ করে খুনের আগে আদর্শের পা হোটেলের তোয়ালে দিয়ে বেঁধে ফেলেছিল তারা। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, আদর্শের পেটের ভিতর থেকে ২০০ গ্রাম খাবার ও মদ পাওয়া গিয়েছে। গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়েছে। ধৃতদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠন করবে পুলিশ।
