তরুণকান্তি দাস: জেনিফার ও ড্যানিয়েল রবিবার রাতে হয়ে গেলেন ‘জেনিয়েল’। রাজকন্যা ও রাজপুত্র। তাঁদের বড় আনন্দের দিন আজ। কিন্তু মন ভাল নেই রাজপুত্রের। কিছুটা ম্রিয়মান রাজকন্যাও। অথচ আলোকমালায় সেজেছে ঘর। রঙিন আলোয় ভেসে যাচ্ছে এই মহল। ফ্ল্যাশবাল্বের ঝলকানি প্রতি মুহূর্তে। তাঁদের দু’জনের এক হওয়ার দিন। এই হলঘরে বিরাট ছবি দু’জনের। সেখানে লেখা, আর তাঁরা দুই নন। এবার তাঁরা এক। একে অপরের। দু’জনের নামের মেলবন্ধন ঘটিয়ে নতুন নামকরণ হয়েছে ‘জেনিয়েল’। ছবি-সহ সেই নয়া নামের বোর্ড সাজানো রয়েছে চার্চের প্রবেশদ্বারে। কিন্তু তাঁদের নতুন জীবনের শুরুর দিনে মনের কোণে সামান্য হলেও কষ্ট। সেই কষ্টের কারণ করোনা ভাইরাস। যার থাবায় এই কলকাতায় বসা চিনা বিবাহ বাসরে নেই কোনও চিন থেকে আগত অতিথি। অনুপস্থিত স্বভূমের প্রিয়জন। যাঁদের সঙ্গে এই কলকাতার বাসিন্দা চিনাম্যানদের যোগরক্ষার সূত্রের অন্যতম হল বিয়ের অনুষ্ঠান।
ধর্মতলার চাইনিজ চার্চ ইয়ে থং-এ রবিবাসরীয় বিবাহবাসরে অতিথি অভ্যাগত তো কম নেই। এই কলকাতায় জন্ম জেনিফারের। ড্যানিয়েলও এই বঙ্গের। পারিবারিকভাবে তাঁদের ঠাকুরদা চলে এসেছিলেন এখানে। কলকাতায় যে গুটিকয় চিনা পরিবার এখনও রয়েছেন তাঁদের ঠিকানা তো সেই ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের লাগোয়া সায়েন্স সিটির অদূরে চায়না টাউন। এদিনের বিয়েতেও হাজির তাঁরা। কেউ এখনও পারিবারিকভাবে ট্যানারি চালান। কারও জুতোর কারবার। কেউ আবার অন্য পেশায় নাম লিখিয়েছেন। আছেন বণিকসভার দু-একজন। সকলেই আশীর্বাদ করছেন নতুন যুগলকে। সেখানে হাজির বাঙালি দু-চারজন। অবাঙালি কয়েকজন ব্যবসায়ী। সকলেরই এই পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। কিন্তু চিন থেকে এসে পৌঁছাননি কেউ? উৎসুক অতিথিরাও। বিশেষ করে যাঁরা চায়না টাউনের বাসিন্দা নন। প্রশ্নটা ঘুরছিল ইতিউতি।
[আরও পড়ুন: সংঘাতের মাঝে ফের আলোচনায় বসার ইঙ্গিত, সোমবার রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের সম্ভাবনা]
পরিবারের লোকজনের কাছে প্রশ্নটা রাখতেই সামান্য ছায়া ঘনাল মুখে। সেই ছায়া ‘জেনিয়েল’-এর উপরও। নাহ। কেউ আসেননি। আসলে এখানে বিয়ে হলে চিনে এখনও যাঁদের শিকড় রয়েছে, আছে নাড়ির টান, তাঁদের তরফে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়। সবসময় একেবারে সদলবলে সবাই হাজির হতে পারেন এমনটা নয়। খরচ তো একটা ব্যাপার। বলছেন ড্যানিয়েল। কিন্তু আসেন। কেউ না কেউ ঠিক চলে আসেন। এবার সেটাও হল না। আক্ষেপ তাঁর। চিনের ভিসাই তো মিলছে না। করোনা ভাইরাসের দাপটে সব গুলিয়ে গুবলেট। ঘর থেকেই বেরোতে পারছেন না কেউ। তায় প্লেনে চড়ে কলকাতা! তবু আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়মরক্ষায়। তাই করোনা ভাইরাসের আক্রমনের পর কলকাতায় বসা চিনা যুবকের ঝলমলে বিয়ের আসরে সবাই আছেন। শুধু চিনের কেউ নেই। শিকড়ের অভাববোধ কষ্ট দিচ্ছে দু’জনকে। জেনিফার ও ড্যানিয়েল। যাঁরা রবিবার রাতে জেনিয়েল হলেন।
The post কলকাতায় গাঁটছড়া চিনা দম্পতির, করোনা আতঙ্কে বিবাহবাসরে নেই স্বভূমের প্রিয়জন appeared first on Sangbad Pratidin.
