অভিরূপ দাস: অসাবধানতাবশত মাংস কাটার দোকানের কসাইয়ের ছুরির কোপে কেটেছিল তর্জনী! তাতেও বিন্দুমাত্র ঘাবড়ে না গিয়ে বাদ পড়া আঙুল নিয়ে বাড়ির লোকের সঙ্গে হাসপাতালে ছুটল একরত্তি! দ্রুত অস্ত্রোপচার করে সেই আঙুল জোড়া লাগিয়ে দিলেন পিয়ারলেস হাসপাতালের ডাক্তাররা। মনের জোর, সাহসিকতার নজির গড়ল চার বছরের ছেলে।
ঠিক কী হয়েছিল?
৪ বছরের ঈশানের বাড়ি যাদবপুরে। বাবা চাকরি করেন। মা কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বাড়ির পাশেই মাংসের দোকান। সম্প্রতি খেলতে খেলতে সেই দোকানে গিয়ে হাত পেতে দেয় ইশান। বুঝতে পারেননি কসাইও। মাংস কাটার ছুরির কোপ বসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কসাই ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে গেলেও ভয় পায়নি ছোট্ট ইশান। "এক্ষুনি হাসপাতালে চল।" পকেটে আঙুল ভরে এই ছিল তার প্রথম কথা।
"ভাগ্যিস! দেরি করেনি।" হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. সহেলী দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, "একট আস্ত আঙুল কেটে আলাদা হয়ে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই ‘শক’ লাগে। বাচ্চাটির সাহস আছে। সকলকেই বলব এমতাবস্থায় ভয় পাবেন না। সময় নষ্ট করবেন না। আঙুলের কাটা জায়গায় নিজেরা কিছু ঘষাঘষি করবেন না। চেষ্টা করুন আঙুলের কাটা অংশটা ঠান্ডা কিছুতে মুড়ে সেটা নিয়ে নিকটবর্তী হাসপাতালে চলে আসতে। যত তাড়াতাড়ি আসতে পারবেন কাটা অংশ জোড়ায় জটিলতা তত কম হবে।" এক্ষেত্রে যেমনটা করেছিলেন ইশানের পরিবারের লোকেরা। হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ডা. অখিলেশ আগরওয়াল, পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সহেলী দাশগুপ্তের প্রচেষ্টায় জোড়া লেগে গিয়েছে ঈশানের আঙুল।
প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল শিশুটির। কেটে বাদ যাওয়ার জায়গার ব্লাড ভেসেলগুলোয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেগুলো মেরামত করে হয়। এই সময় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কেটে যাওয়া ব্লাড ভেসেলের জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। সেই জমাট রক্ত কাটাতে রক্ত পাতলা করার ওষুধ দেন চিকিৎসকরা। ডা. সহেলী দাশগুপ্তর কথায়, ‘‘সেখানে একটা সমস্যা হয়। রক্ত পাতলা করার ওষুধ দিলে আবার রক্তক্ষরণ হয়। এক্ষেত্রেও তেমনটা হচ্ছিল। শিশুটিকে টানা দশদিন আমরা কড়া পর্যবেক্ষণে রাখি। আপাতত সম্পূর্ণ সুস্থ ইশান। নতুন বছরে জোড়া আঙুল দিয়েই কেক খেতে পারবে সে।"