সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: এসআইআরের খসড়া তালিকায় কাদের নাম উঠল না, তা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলে কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের তরফে বিএলএ ও বিএলএ-২ যাঁরা এই কাজে সরাসরি যুক্ত সোমবার দলীয় সভায় তাঁদের আরও একবার 'নিবিড়' বার্তা দিতে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। নেতাজি ইন্ডোরে আজকের সেই সভায় আমন্ত্রিত কলকাতা ও লাগোয়া জেলার ৪০টি বিধানসভার বিএলএ, বিএলএ ২-সহ দলীয় কর্মীরা। বৈধ ভোটারের নাম খসড়া তালিকায় না উঠলে তার জন্য সরাসরি বিজেপিই দায়ী বলে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। তাদের আরও অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন সেই ষড়যন্ত্রে বিজেপির দোসর। একটা বৈধ নামও বাদ গেলে তার ফল মারাত্মক হবে বলে হুমকি দিয়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে 'ষড়যন্ত্র' রোখার রণনীতি ঠিক করতেই আজকের তৃণমূলের সভা। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম-সহ রাজ্যস্তরের নেতৃত্বের উপস্থিতিতে সকাল ১১টার মধ্যে সভা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা।
গত মঙ্গলবার নিজের ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে দলীয় ঝৈাকের দিনই মমতা বলে দেন কোন পরিস্থিতিতে। কেন ভোটারদের নাম ওঠেনি তার খবর নিতে হবে। বলেছিলেন, 'বুথ লেভেল এজেন্টদের আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। আরও নিবিড়ভাবে বিষয়টি তাঁদের জানতে হবে।' তখনই সিদ্ধান্ত হয়, কলকাতা ও কয়েকটি জেলা মিলিয়ে দলীয় স্তরে বিএলএ ও বিএলএ-২-দের বার্তা দিতে বড় সভা হবে। দলীয় স্তরে যা রাজনৈতিক দিক থেকে অভ্রান্ত এৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এসআইআর নিয়ে প্রথম নির্দেশিকা সামনে এসেছিল ২৯ অক্টোবর। তারপর একাধিকবার বহু নতুন নিয়ম সামনে এনেছে কমিশন। প্রক্রিয়াগত বদলও আনা হয়েছে। শেষে খসড়া তালিকায় দেখা গেল, ৫৯ লক্ষ ভোটারের নাম ওঠেনি। তাঁদের মধ্যে মৃত, স্থানান্তর ভোটারও রয়েছেন। অনেকে আছেন যাঁরা ফরম জমাই দিতে পারেননি। আবার অনেকের কমিশনের ২০২৫-এর তালিকায় নামই নেই। সেক্ষেত্রে ফর্ম ৭ পূরণ করে জমা দিয়ে নতুন করে নাম তুলতে পারবেন তাঁরা। তবে আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে। দেখা গিয়েছে, নাম না ওঠার তালিকায় সব থেকে বেশি নাম হিন্দুদের।
তৃণমূল মনে করছে এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিজেপিই ব্যাকফুটে। তারা বারবার রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশি বলে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তত্ত্ব খাড়া করেছে। সেই দাবি মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে কোন পথে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা হবে, তার রণনীতি সাজিয়ে নিতে চাইছে তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবেই মমতার বক্তব্য এক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের দাবি, "এসআইআর প্রক্রিয়া সর্বতোভাবে বিজেপিকেই কোণঠাসা করে দিয়েছে। একদিকে মতুয়াদের সমস্যা, অন্যদিকে, অল্পসংখ্যক নাম বাদ পড়া। ফলে বিজেপির ভবিষ্যদ্বাণী মেলেনি। এদিকে, ডানকুনি পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সূর্য দে-কে মৃত দেখিয়েচে খসড়া তালিকা। তার প্রতিবাদে কাউন্সিলর প্রতীকি সৎকারের আয়োজন করেছিলেন শ্মশানে। এবার তার স্মরণসভা করে আরেক দফায় প্রতিবাদ জানালেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনকে বিঁধে তাঁর তোপ, "এতদিন ভগবানের হাতে ছিল জন্ম-মৃত্যুর হিসাব। এবার বিজেপির দৌলতে নির্বাচন কমিশনের জন্ম-মৃত্যুর ক্ষমতা। এর মধ্যে এসআইআর নিয়ে গুজরাটের তথ্য বলছে সেখান খসড়া তালিকায় নাম না ওঠার সংখ্যা ৭৮ লক্ষ। তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমিশন এখন এমন নতুন সফটওয়ার ব্যবহার করতে শুরু করেছে যেখানে বাংলায় ২০০২ আর ২০২৫-এ মাপিং হয়ে যাওয়া নামগুলোকে বিশেষভাবে স্ক্রুটিনি করে বেশ কিছু নাম বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। ফলে আরও 'নিবিড় নজরদারি' দরকার। সেই বার্তাই দেবেন তৃণমূলনেত্রী।
