অর্ণব আইচ: কলকাতা (Kolkata) থেকে ধৃত ভুয়ো পাসপোর্ট এবং বাংলাদেশিদের বিদেশে পাচার চক্রের মূল পান্ডার সঙ্গে এবার নাম জড়াল লস্কর-ই-তৈবার। জম্মু-কাশ্মীরে সে আস্তানা গেড়েছিল। কাশ্মীর থেকে প্রায়ই উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিতে তার যাতায়াত চলত। ঘটনার তদন্তে নেমে এসব তথ্য হাতে পেয়েছে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh)গোয়েন্দা পুলিশ। সেই সূত্র ধরে ওই পান্ডা মহম্মদ মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার যোগাযোগ রয়েছে বলে অনুমান পুলিশের আধিকারিকদের। লখনউয়ে গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কলকাতা পুলিশও। এই ব্যাপারে আনন্দপুর থানায় গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ (NIA)।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ পুলিশের লখনউ জঙ্গিদমন শাখা (ATS) ও পূর্ব কলকাতার আনন্দপুর থানার যৌথ উদ্যোগ আনন্দপুরের গুলশন কলোনি থেকে গ্রেপ্তার হয় ১৮ জন বাংলাদেশি (Bangladehsi)। ১৭ জন বাংলাদেশি যুবকের জাল পাসপোর্ট তৈরির প্রস্তুতি চালাচ্ছিল চক্রের পান্ডা মাহফুজুর রহমান। এই চক্রের আরও তিনজনকে সিঁথি ও হাওড়া (Howrah) থেকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, দশ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে এই দেশে এসে নিজের জাল ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করে মাহফুজুর।
[আরও পড়ুন: ফের কলকাতায় ওমিক্রন কাঁটা, কোভিড পজিটিভ নাইজেরিয়া থেকে ফেরা প্রৌঢ় ভরতি হাসপাতালে]
এরপর সে চলে যায় উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি। সেখান থেকে পৌঁছয় জম্মু ও কাশ্মীরে। এক বছরেরও উপর সময় ধরে একাধিক জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়ে ছিল মাহফুজুর। গোয়েন্দাদের মতে, ওই সময়ই তার সঙ্গে লস্কর-ই-তৈবার (LeT) জঙ্গিদের যোগাযোগ হয়। জঙ্গি সদস্যদের জাল পরিচয়পত্র তৈরির কাজেও সে যুক্ত ছিল, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। জঙ্গিদের স্লিপার সেলের সঙ্গে তার যোগ ছিল বলেই ধারণা গোয়েন্দাদের। কাশ্মীর থেকে প্রায়শই যে দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ যেত। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক ও কেরলেও যাতায়াত ছিল তার। অসমের কয়েকটি জায়গায় ডেরা তৈরি করেছিল সে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার চোরাপথে বাংলাদেশের মুনশিগঞ্জে নিজের বাড়িতে যায়। সেখানে তার স্ত্রী ও মেয়েও রয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ‘মা ক্যান্টিনে’র বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলে জবাব তলব রাজ্যপালের, পালটা দিল তৃণমূল]
পুলিশের মতে, মুনশিগঞ্জ থেকে ঢাকায় গিয়ে আইএসআই (ISI) এজেন্টদের সঙ্গেও দেখা করে সে। গত চার বছর ধরে সে বাংলাদেশ যায়নি। কলকাতার বেহালা, গড়ফা, মহেশতলা, মেটিয়াবুরুজ, রাজাবাজার, পার্কসার্কাস এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে ছিল সে। মাস দু’য়েক আগে ঘর ভাড়া নেয় আনন্দপুরের (Anandapur) গুলশন কলোনির একটি বাড়ির চারতলায়। বাংলাদেশ থেকে আসা যুবকদের জন্য দেড় মাস আগে ওই বাড়িরই দোতলায় একটি বড় ফ্ল্যাট মাসিক দশ হাজার টাকায় ভাড়া নেয় মাহফুজুর। ওই ফ্ল্যাটটি আগে মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। গত কয়েক বছরে কোচবিহার থেকে শুরু করে মালদহ, বসিরহাটেও ঘর ভাড়া নিয়ে জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে বাংলাদেশিদের বিদেশে পাচার করত সে। জাল ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড তৈরির অভিযুক্ত উত্তর কলকাতার সিঁথির বিশ্বজিৎ দে’র সঙ্গে মাহফুজুরের পরিচয় হয়েছিল পাসপোর্ট অফিসের কাছে। তৎকাল পাসপোর্টকে সামনে রেখেই চলত জালিয়াতি। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত বাকি মাথাদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।