গোবিন্দ রায়: মাটিয়া ও মালদহের পর হাঁসখালিতে কিশোরীর ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনার (Hanskhali Rape Case) জল গড়াল কলকাতা হাই কোর্টেও। এই ঘটনায় দু’টি জনস্বার্থ মামলা দায়েরের আবেদন মঞ্জুর করলেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। আগামিকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার মামলার শুনানির সম্ভাবনা। এদিকে, এই ঘটনায় দলীয় স্তরে তদন্ত শুরু করল তৃণমূল (TMC)। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি রত্না ঘোষ করকে এদিন ফোন করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। ধর্ষণ কাণ্ডের খোঁজখবর নেন তিনি। রত্না ঘোষ কর জানান, “ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত ধরা পড়েছে। রাজনীতির রং না দেখেই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতির কাছে জনস্বার্থ মামলা দায়েরের আরজি প্রথমে জানান এক আইনজীবী। তারপর বিজেপির তরফেও একই দাবি করা হয়। প্রধান বিচারপতি আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা রুজু হয়। মামলাকারীদের দাবি, গত সোমবার রাতে জন্মদিনের পার্টি থেকে ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে কিশোরী। পরেরদিন ভোররাতে মৃত্যু হয় তার। ঘটনার পর ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দেহ দাহ করে দেওয়া হয় বলেই অভিযোগ। অভিযোগ দায়ের হয় চারদিনের মাথায় গত শুক্রবার। তার ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে মামলাকারী যথেষ্ট প্রভাবশালী। তাই নির্যাতিতার পরিবারের কথা মাথায় রেখে এই ঘটনায় হাই কোর্টের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। এই কারণ দেখিয়ে হাই কোর্টে দু’টি জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের হয়। সিবিআই (CBI) তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন মামলাকারীরা।
[আরও পড়ুন: ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে ভয়াবহ রোপওয়ে দুর্ঘটনা, ২ মহিলা পর্যটকের মৃত্যু]
এদিকে, এই ঘটনার জোরকদমে তদন্ত করছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই কিশোরীর প্রেমিক তথা তৃণমূল নেতার ছেলে সোহেল গোয়ালিকে (Sohel Goali) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে পেশের সময় সাংবাদিকদের জবাবে সোহেল জানায়, “আমি কিছু করিনি। কিছু জানি না। প্রেমিক বলে আমাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।”
তার দুই বন্ধুকে আটক করে চলছে টানা জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য। ডেথ সার্টিফিকেট (Death Certificate) ছাড়াই কিশোরীর দেহ দাহ করা হয় বলে অভিযোগ। তবে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া কীভাবে দেহ দাহ করা হল, তা এখনও জানা যাচ্ছে না। সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শ্মশানকর্মী এবং এক হাতুড়ে চিকিৎসক সমীর কুমার বিশ্বাসের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে। ওই হাতুড়ে চিকিৎসক জানান, “কিশোরীর বাবা-মা জানান তাদের মেয়ের তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা করছে। সে কথা শুনে একটা ওষুধ দিয়েছিলাম। তবে কিশোরী সেই ওষুধ খায়নি। কারণ, ওর বাবা-মা বাড়ি ফিরেই দেখেন কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল রাতেই নদিয়ার (Nadia) হাঁসখালির গ্যাড়াপোতা এলাকায় ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে সোহেল গোয়ালির জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে বীভৎস অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয় ওই কিশোরী। সোহেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। পরিবারের দাবি, জন্মদিনের পার্টির নামে ডেকে নিয়ে গিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ করে সোহেল। এক মহিলা আত্মীয়ার সাহায্যে বাড়ি ফেরে কিশোরী। সেই সময় থেকে প্রচণ্ড অসুস্থ ছিল সে। রক্তক্ষরণও হতে থাকে। ভোরের দিকে কিশোরীর জন্য ওষুধ আনতে যান পরিবারের সদস্যরা। তবে ততক্ষণে সব শেষ। প্রাণ যায় নাবালিকার। তবে সেই সময় কাউকে কিছুই জানাননি নিহতের পরিজনেরা। দেহ দাহ করে দেওয়া হয়। অভিযোগ, তৃণমূল নেতার (TMC Leader) ছেলে সোহেলের পরিবারের তরফে দেহ দাহ করতে ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তড়িঘড়ি দেহ দাহ না করলে প্রাণনাশের এবং বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। তাই ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দেহ দাহ করে দেওয়া হয়। গত শুক্রবার হাঁসখালি থানায় সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। আপাতত পুলিশের জালে তৃণমূল নেতাপুত্র। এদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় SUCI। পুলিশ এবং কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।