অর্ণব আইচ: সাবমেরিনো। এক বড় গ্লাস বিয়ারের মধ্যে টাকিলার 'বম্ব শট'। আর এই বিয়ার-টাকিলার ককটেলেই চড়চড় করে উঠবে নেশা। গত ৬ এপ্রিল গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত এই 'সাবমেরিনো'র নেশায় ডুবে ছিল পরিচালক সিদ্ধান্ত দাস ওরফে ভিক্টো। আর তারই ফল ঠাকুরপুকুর বাজারে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ির ধাক্কা (Thakurpukur Accident) । এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক পথচারীর। আহত হয়েছেন আরও প্রায় আটজন। সিদ্ধান্তর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু হয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। আর তাঁদের তদন্তেই উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

লালবাজারের সূত্রের খবর, সিদ্ধান্তকে জেরা করে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরেছে যে, সে ও তার অন্য কয়েকজন সহকর্মী, যারা সিরিয়াল পরিচালনা ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত, তারাও পছন্দ করত বিভিন্ন ধরনের মদ নিয়ে 'এক্সপেরিমেন্ট'। '। এর আগেও এই ধরনের 'এক্সপেরিমেন্ট' করার পরও নেশায় চুর হয়ে হাতে স্টিয়ারিং নিয়েছিল সিদ্ধান্ত। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালিয়ে পেরিয়ে গিয়েছে বেহালা, ঠাকুরপুকুর, হরিদেবপুরের অপরিসর রাস্তা। কিন্তু 'সাবমেরিনো'র এক্সপেরিমেন্ট যে এমন ঘটনার সামনে ফেলবে, তা সিদ্ধান্ত ভাবতেও পারেনি বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
অভিযুক্ত পরিচালক সিদ্ধান্তকে জেরা করে গোয়েন্দা পুলিশ জেনেছে যে, সন্ধ্যার পর থেকে প্রায় সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ককটেল নিতে শুরু করে সিদ্ধান্ত ও তার কয়েকজন সঙ্গী। এমনকী, অভিনেত্রী ঋ ও কার্যনির্বাহী প্রযোজক শ্রিয়া বসু, যাঁরা ঠাকুরপুকুরে গাড়ি ধাক্কা (Thakurpukur Accident) দেওয়ার সময় সিদ্ধান্তর গাড়িতে ছিলেন, তাঁরাও সিদ্ধান্তর মতো একইভাবে ককটেল নিয়েছিলেন কি না, গোয়েন্দারা তা-ও জানার চেষ্টা করছেন। তবে গোয়েন্দারা জেনেছেন যে, যাদবপুরে একটি শপিং মলের পানশালায় বসেই একাধিক ধরনের মদ খেয়ে ককটেল করে সে। এর পর রাতে ঠাকুরপুকুর এলাকায় বন্ধু সহ অভিনেতার বাড়িতে যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত ককটেল নিয়ে নতুন ধরনের 'এক্সপেরিমেন্ট' করার পরিকল্পনা করে। কয়েকজন বারণ করলেও শোনেনি ওই পরিচালক।
সে তার কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে 'টাকিলা গ্লাস'-এর মধ্যে টাকিলা ঢালতে থাকে। এর পর বড় বিয়ারের গ্লাসে বিয়ার ঢালে। বিয়ারের গ্লাসের মধ্যে ফেলে দেয় টাকিলা ভর্তি ছোট গ্লাস। টাকিলার 'বম্ব শট' বিয়ারের মধ্যে মিশতেই তৈরি হয়ে যায় 'সাবমেরিনো'। প্রায় সকাল পর্যন্ত একটির পর একটি 'সাবমেরিনো' খেতে থাকে সিদ্ধান্ত। গোয়েন্দারা জেনেছেন, এই ককটেল অল্প সময়ের মধ্যে নেশা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। আর বিয়ার ও টাকিলার ককটেলের নেশা অনেকক্ষণ থাকে। তাই সকাল আটটার পর গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার পরও নেশার ঘোরে সে দিন ও রাতের তফাত বুঝতে পারেনি। তারই জেরে দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে পুলিশ।