shono
Advertisement

Roddur Roy: গানের গুঁতো আর মোক্সাবাদ! রাতদুপুরে রোদ্দুর রায়ের জোড়া অত্যাচারে ঘুম ছুটেছে বন্দিদের

একটি মামলায় জামিন পেলেও অন্য মামলায় আপাতত জেলবন্দি এই ইউটিউবার।
Posted: 09:03 AM Jun 21, 2022Updated: 10:55 AM Jun 21, 2022

অর্ণব আইচ: ‘রাত হয়েছে। এবার ঘুম থেকে ওঠো।’ চোখ কচলে ড্যাবড্যাব করে চাইতেই চোখের সামনে দাড়িভরতি মুখটা দেখে চমকে ওঠে পাপ্পু। আবছা আলোয় সে দেখতে পায়, লোকটির দাঁত বের করা হাসি। চিনতেও পারে ইউটিউবার রোদ্দুর রায়কে (Roddur Roy)।

Advertisement

“এবার উঠে পড়ো ভাই। সবাই ওঠো। রাতে কেউ ঘুমোয় নাকি? চল তোমাদের গান শোনাই।” হেসে বলে ওঠেন লোকটি। তখন ক’টা হবে? রাত বারোটা অথবা একটা। বহু রাত বিভিন্ন অবস্থায় কেটেছে কসবার স্বষোঘিত ‘ডন’ সোনা পাপ্পুর। কিন্তু তার বহু পরিচিত লালবাজারের (Lalbazar)সেন্ট্রাল লকআপে এসে এই অবস্থায় পড়তে হবে, জীবনে কখনও ভাবতে পারেননি। ইউটিউবার (YouTuber) রোদ্দুর রায়ের মধ্যরাতের ‘মোক্সা মজা’র চোটে রীতিমতো কাঁদোকাঁদো দক্ষিণ কলকাতার কসবা, তপসিয়া, আনন্দপুরের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ওই তোলাবাজির অভিযুক্ত। এমনকী, বড়তলা থানার লকআপের বন্দিরাও তাঁর ভয়ে ছিল ভীত। রাত হতেই থানার লকআপে নিজস্ব ভঙ্গিমায় চিৎকার করে যখন তখন অশ্লীল গান গেয়ে উঠেছেন। আবার কখনও বা দুপুরেও।

[আরও পড়ুন: ‘যোগ ব্যায়ামেই মিলবে রোগমুক্তি’, যোগ দিবসের আগেই সুস্থ থাকার উপায় বাতলালেন ১২৬ বছরের স্বামী শিবানন্দ]

দক্ষিণ কলকাতায় পাটুলি থানায় (Patuli PS) রোদ্দুরের বিরুদ্ধে অন্য একটি অভিযোগ রয়েছে। আলিপুর থানায় তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে পাটুলি থানা। ওই থানায় তিনি কী কীর্তি করতে পারেন, তা নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছেন আধিকারিকরা। যদিও পুলিশের এক আধিকারিক জানান, পুলিশের সঙ্গে সে কোনও খারাপ ব্যবহার করেননি। দেননি কোনও গালিগালাজও। রোদ্দুর রায়ের ‘টার্গেট’ শুধু অন্য বন্দিরাই।

পুলিশ জানিয়েছে, রোদ্দুর রায়কে যখন গোয়া থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়, ওই একই সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতার ‘ত্রাস’ বসেই পরিচিত সোনা পাপ্পু। ধরা পড়ে তার আরও পাঁচ সঙ্গী। গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখায় জেরার জন্য আনা হয় রোদ্দুর রায় ও কসবায় তোলাবাজি ও বিভিন্ন গোলমালে অভিযুক্ত সোনা পাপ্পু ও তার দলের পাঁচজনকেও। জেরার সময় ছাড়া ওই ৬ জনের সঙ্গে বসতে বলা হয় রোদ্দুর রায়কে। প্রথম দিনে রোদ্দুরের চেহারা দেখে ও তার পুরনো কীর্তি জানতে পেরে হাসি মশকরা করেছিল পাপ্পু ও তার দলের লোকেরা। কাজটি যে কত বড় ভুলে ভরা, তা তারা টের পায় মধ্যরাতে।

সন্ধ্যার পর লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে অভিযুক্তদের নিয়ে যাওয়া হয় সেন্ট্রাল লকআপে। একই ঘরে রাখা হয়েছিল রোদ্দুর ও পাপ্পুদের। পরের দিন পাপ্পু ও তার সঙ্গীরা গোয়েন্দা আধিকারিকদের জানান, প্রথম রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ঘুমিয়েই পড়েছিলেন তাঁরা। হঠাইই রোদ্দুর রায় সোনা পাপ্পুকে ডাকতে থাকেন। ঘুম ভেঙে পাপ্পু চোখ মেলতেই রোদ্দুরের একগাল হাসি। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রোদ্দুর ঘুম থেকে ডাকতে শুরু করেন পাপ্পুর বাকি সঙ্গীদের। দু’একজন রোদ্দুরকে ধমকালেও তখন বেপরোয়া ভাব ইউটিউবারের। পাপ্পুদের রোদ্দুর বলেন, রাতটা ঘুমোনোর সময় নয়। জাগার সময়। রাত মানে গান গাওয়ার সময়। আনন্দ করার সময়। এরপরই চিৎকার করে হাততালি দিয়ে গান শুরু করেন রোদ্দুর। সেই গান পৌঁছয় অন্য ঘরগুলিতেও। প্রায় ভোররাত পর্যন্ত ‘গানের গুঁতো’ সহ্য করতে হয় পাপ্পু ও অন্য বন্দিদের।

[আরও পড়ুন: দুস্থ পড়ুয়াদের জন্য বিশ্বমানের উদ্যোগ রাজ্যের, কলেজে পড়াকালীনই মিলবে ‘সরকারি ইন্টার্নশিপে’র সুযোগ]

তারা পুলিশকে জানিয়েছে, প্রথম রাতটা নিজস্ব ভঙ্গিমায় বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল গানের উপর দিয়ে গেলেও পরের রাত থেকে ‘অত্যাচার’ আরও বাড়তে থাকে। গান ছিলই। তার সঙ্গে সোনা পাপ্পুদের ‘মোক্সা’ বোঝাতে শুরু করে রোদ্দুর। তার সঙ্গে ‘মোক্সা’ নিয়ে আন্তর্জাতিক ‘বিপ্লব’ ও বিষয়টির উপর ‘গবেষণা’ নিয়ে রীতিমতো বক্তব্য পেশ করতে থাকে সে। প্রত্যেক রাতের গান আর বিরামহীন ‘বক্তৃতা’ শোনার পর ক্লান্ত পাপ্পু ও তার সঙ্গীরা পুলিশ আধিকারিকদের অনুরোধ জানায়, তাদের অন্য ঘরে সরিয়ে নিতে। শেষে আদালতের নির্দেশে বড়তলা থানায় তাকে নিয়ে যাওয়ার পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে পাপ্পুরা। যদিও তারা একেবারে নিশ্চিত নয়। কারণ, ফের তাদের দেখা হতে পারে জেলে। সেখানে ফের রোদ্দুরের ‘পাল্লায়’ পড়লে তাদের অবস্থা কী হতে পারে, তা নিয়ে পাপ্পুরা এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছে। এমনই তথ্য পুলিশের কাছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement