অর্ণব আইচ: পরিবার নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata) একটি নামী হোটেলে নৈশভোজ সারছিলেন এক বিচারক। হঠাৎ ‘লোডশেডিং’। অন্ধকারে বন্ধ হয়ে গেল হোটেলের অতিথিদের খাওয়াদাওয়া। এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালে চলছিল এক রোগীর গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। ওই পরীক্ষার জন্য বিদুৎ অনিবার্য। হঠাৎই নেমে এল অন্ধকার। বন্ধ হয়ে গেল পরীক্ষা। একই সময়ে এই ‘লোডশেডিং’-এর কারণেই সমস্যা হয়েছিল একাধিক অস্ত্রোপচারেও।
এভাবে কখনও পার্ক স্ট্রিট, কখনও ভবানীপুর, আবার কখনও বা শেক্সপিয়র সরণির বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ হয়ে যাচ্ছিল ‘লোডশেডিং’ (Loadshedding)। অবস্থা এমনই যে, কোনও অফিসে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলাকালীন চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। যেখানে কলকাতায় যখন তখন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া বা ‘লোডশেডিং’ প্রায় বন্ধ, সেখানে এভাবে হঠাৎ লোডশেডিংয়ের বিষয়টি ঘিরে শুরু হয়েছিল ধন্দ। শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংস্থার আধিকারিকরাই সমস্যার সূত্র খুঁজে বের করলেন।
[আরও পডুন: মুসলিম হয়ে বড়দিন পালন! সালাহকে ‘বিধর্মী’ বলে তোপ নেটিজেনদের]
দেখা গেল, এই হঠাৎ ‘লোডশেডিং’-এর পিছনে রয়েছে ফিউজ চুরি। সিসিটিভির (CCTV) সূত্র ধরেই পুলিশের হাতে দক্ষিণ কলকাতার বেলতলা রোড থেকে গ্রেপ্তার হল সৈকত দাস নামে এক যুবক। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান সৈকত অতিরিক্ত আয়ের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছিল সিইএসসি-র (CESC) ট্রান্সফর্মার থেকে ফিউজ চুরি। ৬০০ টাকা দামের ফিউজের তার সে বিক্রি করত ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে বিদ্যুৎ সংস্থায়। হঠাৎ করেই হয়ে যাচ্ছে ‘লোডশেডিং’। বিদ্যুৎ সংস্থায় ফোন করেও অমিল কারেন্ট। নামী হোটেল থেকে হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ থেকে অফিস, বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ করেই নেমে আসছে অন্ধকার। একই সময় যেহেতু মাত্র কয়েকটি বাড়ি বা অফিসে এই ধরনের ঘটনাটি ঘটছে, তাই বিদ্যুৎ সংস্থার আধিকারিক ও কর্মীরা পরীক্ষা করেন ট্রান্সফরমারগুলি।
[আরও পডুন: দুস্থ মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে যৌনকর্মীদের ফাঁদে যুবক, সোনাগাছিতে লুট ৬০ হাজার টাকা]
প্রথমে ইঁদুরের কীর্তি বলেও সন্দেহ করা হয়। কিন্তু শেষে দেখা যায়, ভিতর থেকে উধাও ফিউজ। নতুন ফিউজ বসালেই ফের চলে আসছে বিদ্যুৎ। কারও সন্দেহ রইল না যে, ফিউজ চুরির ফল এটি। পার্ক স্ট্রিট, ভবানীপুর, শেক্সপিয়র সরণি থানায় একের পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে ১৫টি ফিউজ চুরির অভিযোগ দায়ের হয়। একসঙ্গে প্রত্যেকটি থানা ও লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগও শুরু করে তদন্ত। এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ ঘেঁটে এক যুবককে শনাক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার ডেরায় তল্লাশি চালিয়ে ৩১টি ফিউজ উদ্ধার হয়।