সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদের আচরণে ক্ষুব্ধ দলেরই মহিলা সাংসদ! প্রতিবাদে ইতিমধ্য়ে দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন তিনি। এমনকী, তৃণমূলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন 'মর্মাহত' সাংসদ। চিঠির প্রতিলিপি পাঠাচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। দলীয় সূত্রে খবর, সবমিলিয়ে পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে তৃণমূল সুপ্রিমোকে হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে দলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
গত শুক্রবার 'ভূতুড়ে' ভোটার ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনে যাওয়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। সূত্রের খবর, ওইদিন কমিশনে যে স্মারকলিপি জমা করা হয়েছিল সেখানে ওই মহিলা সাংসদের নাম ছিল না। অথচ কমিশনে যাওয়া প্রতিনিধি দলে তাঁকে থাকতে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। সেই সময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য, স্মারকলিপিতে তাঁর নাম হাতে লিখে দেওয়া হয়। যখন এই প্রক্রিয়া চলছে ঠিক তখনই প্রবীণ সাংসদ তাঁর মহিলা সতীর্থকে কটাক্ষ করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। লাগাতার কটাক্ষ-কটূক্তি চলতে থাকায় কমিশনের সামনে ফুটপাথে পাহারায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের প্রবীণ সাংসদকে গ্রেপ্তার করতে বলেন। মহিলা সাংসদের এমন আচরণে খানিকটা হতবাক হয়ে যায় উপস্থিত বাকিরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁরা ওই প্রবীণ সাংসদকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কমিশনের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও থামেননি। বরং ক্রমাগত বলতে থাকেন, তিনি কোটায় সাংসদ হননি। অন্য দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেননি। এমন পরিস্থিতিতে মহিলার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে প্রবীণ সাংসদের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় এফআইআর করতেও উদ্যত হয়েছিলেন মহিলা সাংসদ। কোনওমতে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাঁকে শান্ত করেন বাকিরা।
এরপরই বিষয়টি নিয়ে দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বাকযুদ্ধ শুরু হয়। অভিযোগ, বিভিন্নভাবে মহিলা সাংসদকে আক্রমণ করতে শুরু করেন ওই প্রবীণ নেতা। কখনও বলেন, অপ্রয়োজনীয় নাটক করছেন, কখনও আবার মহিলা সতীর্থকে 'ভার্সেটাইল ইন্টারন্যাশনাল লেডি', ' ইন্টারন্যাশনাল ব্রেভ লেডি' বলে কটাক্ষ করতে থাকেন। এমন অবস্থায় মহিলা নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আরেক নতুন সাংসদ। তিনিও অবশ্য রাজনীতির দুনিয়ায় পোড়খাওয়া নেতা। হোয়াটসঅ্য়াপ গ্রুপে বাদানুবাদ চলাকালীন প্রবীণ সাংসদকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবাইকে নিয়ে চলার পরামর্শ মনে করিয়ে দেন তিনি। সেই দায়িত্ব পালনে নজর দেওয়ারও পরামর্শ দেন। এতেই আরও তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন প্রবীণ নেতা। নতুন সাংসদকেও আক্রমণ শানান। বলেন, দলবাজি করার অভিযোগেই পুরনো দল থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। নবীনের সংসদীয় এলাকায় গিয়ে তাঁর 'কীর্তি' ফাঁস করে দেবেন বলেও হুমকি দেন। এমনকী, মহিলা সাংসদ কেন পুলিশ ডেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করাতে পারলেন না, তা নিয়েও খোঁচা দিতে থাকেন। এমন অবস্থায় গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান মহিলা সাংসদ। এরপরই বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানিয়ে দলীয় নেত্রীকে চিঠি দেন। সূত্রের দাবি, পরিস্থিতি সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে মমতাকেই। তবে এই প্রবীণ-নবীন সাংসদদের এমন বাদানুবাদ যে বেনজির তা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই।