রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীই কি বঙ্গ বিজেপির মুখ! খোদ গেরুয়া শিবিরের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যর মন্তব্যই এমন জল্পনা উসকে দিল বুধবার। প্রসঙ্গত, বাংলায় এখনও পর্যন্ত বিজেপি কখনও কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বা ‘মুখ’ করে ভোটে লড়েনি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও দিলীপ ঘোষের রাজ্য সভাপতিত্বেও বিজেপি কাউকে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী বলে তুলে ধরেনি। বিজেপি নেতারা বলেন, দলের মুখ একজনই। তিনি নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু এবার ছাব্বিশের ভোটের আগে শুভেন্দুকে পাশে বসিয়ে শমীকের মন্তব্যে জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। শুধু তাই-ই নয়, শমীক রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে একসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকও সম্ভবত এই প্রথম।
ঠিক কী বলেছেন শমীক? লিওনেল মেসির সফর ঘিরে যুবভারতীতে বিশৃঙ্খলার পর বছর ঘুরলেই কলকাতায় টি-২০ বিশ্বকাপের ম্যাচ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কলকাতা পুলিশ মিটিংয়ে বসেছে ইতিমধ্যেই। এই নিরাপত্তা প্রসঙ্গই বুধবার উঠে আসে বিজেপি দপ্তরে শমীক ও শুভেন্দুর যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে। ইডেনে বিশ্বকাপ ম্যাচ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের প্রস্তুতির কথা উঠতেই শুভেন্দুকে পাশে নিয়ে শমীকের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “জুন মাসে এই বৈঠক আবার হবে। বিরোধী দলনেতাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে দেখবেন।”
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, রাজ্যে ইতিমধ্যেই ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। শমীক যে সময়ের কথা বলছেন, তখন রাজ্যে নতুন সরকার তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। জয়ের ব্যাপারে তিনি কি একশো শতাংশ নিশ্চিত? তাহলে কি শুভেন্দু অধিকারীই হচ্ছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী? মুখ? শমীকের মন্তব্যে বেড়েছে জল্পনা। ছাব্বিশের ভোটে তাহলে কি বঙ্গ বিজেপির মুখ শুভেন্দুই? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে শমীক বলেন, “বিজেপি কোনও মুখ মুখোশের রাজনীতি করে না। যে মন্ত্রিসভা গঠিত হবে সেখানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিশ্চিত ভাবেই থাকবেন।” শমীকের ব্যাখ্যা, “উনি (বিরোধী দলনেতা) তো পুলিশের সঙ্গে লড়াই করেন। তাই পুলিশের লোকেদের চেনেন, ওরাও চেনে। তাই ওই কথা বলেছি।’’
একইসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, বৈঠক যে তিনি (শুভেন্দু) করছেন তা কালের নিয়মে লেখা হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সভাপতির পাশে বসে হাসিমুখে তখন শুভেন্দুর ব্যাখ্যা, ইডেন-প্রসঙ্গে তাঁর উপস্থিতির কথা ‘সিম্বলিক’। পুলিশের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার কারণে তিনি (শমীক) বিষয়টি বলেছেন-এর বাইরে আলাদা কোনও রাজনৈতিক ইঙ্গিত নেই বলেই দাবি বিরোধী দলনেতার। এদিকে শুভেন্দু সম্পর্কে শমীকের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘শমীক ভট্টাচার্য এখনও কমিটি করে উঠতে পারেনি। এটা একটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে। আদি বিজেপি বনাম তৎকাল বিজেপির। তাই কমিটি বের করার জন্য শমীক এখন তুলসিপাতা-বেলপাতা রাখছে।’’
এদিন বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের ইস্যুতেও সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন শমীক, শুভেন্দু। একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে বিজেপি নেতত্বের দাবি, এখনও পর্যন্ত বিজিবিএস ঘিরে ঘোষিত বিনিয়োগের সঙ্গে বাস্তবে তার রূপায়ণ নগন্য। মৌ সই হলেও অধিকাংশ কার্যকর হয়নি, কর্মংস্থানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলনও নেই বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। মেসিকে নিয়ে যুবভারতীতে বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদে বুধবার দলীয় বিধায়কদের নিয়ে স্টেডিয়ামের বাইরে বিক্ষোভ দেখান শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও সুজিত বসুর গ্রেপ্তারির দাবির পাশাপাশি বলেন, রাজ্য সরকারের তদন্ত কমিটি মানবেন না, নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। যদিও ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলেও মাঠে ঢোকার গেট খোলা না থাকায় ফিরে আসেন বিরোধী দলনেতা-সহ বিজেপি বিধায়করা।
