কৃষ্ণকুমার দাস: তৃণমূল কংগ্রেসের বহু প্রতীক্ষীত সাংগঠনিক রদবদল শুরু হয়ে গেল জেলবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদিত ওই কেন্দ্রের দশটি ওয়ার্ডে ব্লক সভাপতি নিয়োগ করা হল। এর মধ্যে নতুন সাতজন ওয়ার্ড সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন। পুরনো তিনজনকে পুনরায় নিযুক্ত করা হয়েছে। পদে থেকেও দলের দায়িত্ব পালন না করায় ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রাক্তন কাউন্সিলর অশোকা মণ্ডলের স্বামী অশোক মণ্ডল এবং ১২৫ নম্বর ওয়ার্ডে মিহির বসাককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নতুন সভাপতি নিয়োগ করেছে তৃণমূল। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে বেহালা পশ্চিমের ১২৮, ১২৯, ১৩০ এবং ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে দলের সভাপতি ছিল না। সেখানেও বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি ও ভূতুড়ে ভোটার নিয়ে কাজ করার জন্য নেত্রীর সম্মতিতে চারজন নতুন সভাপতি নিয়োগ করা হল।

বেহালা পশ্চিমের ১০টি ওয়ার্ডেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদিত তালিকা মেনে সভাপতি নিয়োগের চিঠি তুলে দিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল সভাপতি বিধায়ক দেবাশিস কুমার। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর কেন্দ্র থেকে রদবদলের নিয়োগ শুরু হওয়া নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে বৃহস্পতিবার দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, "দীর্ঘদিন ধরে ওই কেন্দ্রে তৃণমূল বিধায়ক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেই। কিন্তু নেত্রীর নির্দেশে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের কাজ ২৯৪টি কেন্দ্রেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ভোটার লিস্টের কাজও বুথে-বুথে চলছে। তৃণমূল সভাপতি ছিলেন না। আবার একাধিক ওয়ার্ডে সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনে নতুন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হল। দলের নির্দেশ মেনে আমি শুধুমাত্র নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছি।" সূত্রের খবর, তৃণমূলের তরফে এদিন দায়িত্বপ্রাপ্ত ১০ ওয়ার্ড সভাপতিকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, "পারফরম্যান্সই শেষ কথা। দায়িত্ব ১০০ শতাংশ পালন করতে না পারলে ছ'মাস বাদে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।"
বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ২০২১ সালের ২২ জুলাই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হন। তারপর থেকে ওই বিধানসভা কেন্দ্রে নেত্রীর নির্দেশে সাংগঠনিক কাজ দেখছিলেন স্বয়ং জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস কুমার। কিন্তু বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসার জন্য এবং ভোটার তালিকার কাজ আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে এবার দলের তরফে বেহালা পশ্চিমের দশটি ওয়ার্ডেই তৃণমূলের সংগঠনে রদবদল করা হল। পার্থ জমানাতেও দায়িত্বে ছিলেন, এবারও ফের ওয়ার্ড তৃণমূল সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন এমন তিনজন হলেন - ১১৮ ওয়ার্ডের অঞ্জন চক্রবর্তী, ১২৭ ওয়ার্ডের উৎপল দত্ত এবং ১৩২ ওয়ার্ডের অভিজিৎ দে। দুই পুরনো ব্লক সভাপতিকে সরিয়ে ১১৯ ওয়ার্ডে অংশুকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং ১২৫ ওয়ার্ডে বিশ্বজিৎ অধিকারীকে নতুন দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল।
১২৬ ওয়ার্ডে প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রয়াত শিপ্রা ঘটক সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর মৃত্যুতে পদটি দীর্ঘদিন শূন্য ছিল। এবার নতুন সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুদীপ রায়কে। চারটি ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন সভাপতি ছিল না। সেই ১২৮ ওয়ার্ডে সঞ্জীব রাজ, ১২৯ ওয়ার্ডে সুবীর বরাট, ১৩০ ওয়ার্ডে কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ১৩১ ওয়ার্ডে দেবজ্যোতি গায়েনকে ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হল। ১৩১ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়। ভোটার তালিকার কাজ ও সংগঠন মজবুত করতে এই রদবদল বলে দাবি।