সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একুশের বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে পদ্ম শিবির আলো করে বসেছিলেন একঝাঁক সেলিব্রিটি। নির্বাচনে অনেকে প্রার্থীও হয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচবছর বাদে ছবিটা অনেকটা ভিন্ন। গেরুয়া শিবির সেই গ্ল্যামারের ছটা থেকে অনেকটাই দূরে। ক্রমশ দলে তারকা সংখ্যা কমেছে। যারা এখনও খাতায় কলমে দলে রয়েছেন, তাঁদের অনেকেও নিষ্ক্রিয়।
বঙ্গ রাজনীতিতে বিজেপির চমকপ্রদ উত্থান ২০১৪ সালের পর থেকে। আর দলে তারকাদের আগমন শুরু ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে। সেসময় নিত্যদিন তৃণমূলের কোনও না কোনও নেতা বা কোনও মাঝারি মানের সেলিব্রিটি গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাতেন। ২০১৯ সালে একবার একঝাঁক মাঝারি মানের সেলিব্রিটিকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে যোগদান করায় গেরুয়া শিবির। সব মিলিয়ে বিজেপির তারকা সংখ্যাটা নেহাত কম ছিল না। শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, যশ দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে পার্নো মিত্র, মৌমিতা গুপ্ত, রূপাঞ্জনা মিত্র, রূপা ভট্টাচার্য, কাঞ্চনা মৈত্র, ঋষি কৌশিক, কৌশিক রায়, বনি সেনগুপ্ত, রিমঝিম মিত্রকে ছিলেন না। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এরা কেউই এখন হয় বিজেপিতে নেই, নয় নামমাত্র রয়ে গিয়েছেন নিষ্ক্রিয় হয়ে। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে। মিঠুন চক্রবর্তী, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, হিরণ চট্টোপাধ্যায়েরা বিজেপিতে প্রতিষ্ঠিত।
সেলেবদের বিজেপিতে যোগ। ফাইল ছবি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন এই সেলেবকূল একসময় গেরুয়া শিবির নাম লেখালেও এখন তাঁদের মোহভঙ্গ হচ্ছে? আসলে যে সব সেলিব্রিটিরা উনিশ বা একুশের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগই আদর্শগতভাবে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। আবার দু'একজন ব্যতিক্রম ছাড়া নিজেদের পেশাগত ক্ষেত্রেও সুবিধাজনক জায়গায় ছিলেন না। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই সেলেব কূল রাজনীতিকে 'বিকল্প পেশা' হিসাবে দেখছিলেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বিনোদন জগতের কোণঠাসা হয়েই রাজনীতির জগতে ঢুঁ মেরেছিলেন অনেকে। এদের কারও কারও অভিযোগ ছিল, শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা না থাকলে বাংলার বিনোদুনিয়ায় কাজ মেলে না। তাই বাধ্য হয়ে গেরুয়া শরণার্থী হতে হয়েছে। অবশ্য সবার ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়। অনেকে হয়তো সত্যিই রাজনীতি করতে চাইছিলেন, এবং বিজেপির মধ্যে সম্ভাবনা দেখছিলেন। যেমনটা সেসময় বাংলার রাজনৈতিক মহলের অনেকেই দেখছিলেন। এই সেলেবদের একটা বড় অংশ এই আশায় বিজেপিতে যোগ দেন, যে বঙ্গে গেরুয়া শিবির ক্ষমতায় এলে আর কিছু হোক না হোক, প্রভাব খাটিয়ে নিয়মিত কাজ পাওয়া যাবে। তাছাড়া ক্ষমতার আলিন্দে থাকলে সরকারি পদটা, সরকারি প্রকল্পে প্রচারের মুখ হওয়ার মতো কাজটা পাওয়া যেতে পারে।
পার্নোর তৃণমূলে যোগ। ফাইল ছবি।
কিন্তু সেসব স্বপ্ন অচিরেই ভেঙে যায়। একুশে ভরাডুবি হয় বিজেপির। যার অবধারিত ফলশ্রুতি যেসব সেলেব নানা আশায় এবং নানা আছিলায় গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান তাঁদের একে একে মোহভঙ্গ হওয়া শুরু করে। পার্নো মিত্র, রূপাঞ্জনা মিত্র, রিমঝিম মিত্ররা এখন তৃণমূলে। শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, বনি সেনগুপ্তরা সরসরি তৃণমূলে যোগ না দিলেও ইদানিং শাসক ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। বাকি যারা ছিলেন তাঁরা বিজেপিতে নিষ্ক্রিয়। একমাত্র বিজেপির টিকিটে যারা কোনও না কোনও সময় জনপ্রতিনিধি হয়েছেন সেই রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, হিরণ চট্টোপাধ্যায়েরা এবং দলের প্রথম সারির মুখ হিসাবে উঠে এসেছেন সেই রুদ্রনীল ঘোষ রয়ে গিয়েছেন। আসলে এদের কাছে এখন রাজনীতিটাই প্রধান পেশা, রুদ্র এবং মিঠুন বাদে বাকিরা অভিনয় জগতে সক্রিয়ই নন। এঁদের গেরুয়া সংশ্রব ছেড়ে শাসক শিবিরের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার কারণও অনেকটা যেকারণে তাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তেমনই। এখন আর বিজেপির মধ্যে তাঁরা সম্ভাবনা দেখছেন না। বরং শাসকদলের ঘনিষ্ঠবৃত্তে থাকলে পেশাগত ক্ষেত্রে খানিকটা হলেও সুবিধা হচ্ছে, সেটা অস্বীকার করা যায় না। তাছাড়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে সংস্কৃতি এবং বিনোদন জগতের কলাকুশলীদের সম্মান দেন, সেটাও এক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছে।
