shono
Advertisement

বেসরকারি স্কুলের দৌরাত্ম্য কমাতে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত রাজ্যের, নেতৃত্বে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি

এ বিষয়ে কী বললেন শিক্ষামন্ত্রী?
Posted: 09:14 PM Jun 06, 2022Updated: 09:16 PM Jun 06, 2022

দীপঙ্কর মণ্ডল: বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের দৌরাত্ম্য রুখতে প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে স্বাস্থ্য কমিশন গড়েছে রাজ্য। একই ধাঁচে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাইভেট স্কুলের যথেচ্ছাচার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবার গড়তে চলেছে কমিশন। যার মাথায় থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতি। যতদূর ইঙ্গিত, রাজ্য বিধানসভার আগামী বাদল অধিবেশনে এই সংক্রান্ত বিল পেশ হতে পারে।

Advertisement

বেসরকারি স্কুলের ‘তুঘলকি আচরণে’ লাগাম দিতে নিয়ন্ত্রক কমিশন তৈরির আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে (Bratya Basu) সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছে অভিভাবকদের একটি সংগঠন। ২৮ মে’র সেই চিঠির আরজি, বেসরকারি স্কুলগুলির ব্যবসায়িক মনোভাব ও দৌরাত্ম্যে রাশ দিতে অবিলম্বে আইন প্রণয়ন এবং হাইকোর্টের বিচারপতি ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি রেগুলেটরি কমিটি গঠন করা হোক। সূত্রের খবর, বিষয়টিকে নবান্ন যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে। স্থির হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমের অনায্য বিলের মতো বেসরকারি স্কুলেও যদি ফি বা অন্য কিছু নিয়ে অনিয়মের কোনও অভিযোগ আসে, তা প্রস্তাবিত ওই কমিশনে পেশ করা যাবে। স্কুল ও অভিযোগকারীকে শুনানিতে ডেকে নিষ্পত্তি করবে কমিশন।

[আরও পড়ুন: রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রী, সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার]

পরিকল্পনাটি কবে বাস্তবায়িত হবে? সোমবার দপ্তর থেকে বেরনোর পথে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “সমস্ত রূপরেখা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ভাবনাচিন্তাস্তরে আছে। দ্রুত জানিয়ে দেব।” ইউনাইটেড গার্জিয়ানস অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি কনভেনশন শেষে মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রক কমিশন গড়ার আরজি জানায়। শিক্ষামন্ত্রী সেই আবেদনে এদিন সিলমোহর দেওয়ার পর সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, “লাগামছাড়া ফি বৃদ্ধি-সহ নানান বিষয়ে বেসরকারি স্কুলের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে রাজ্যে আইন প্রণয়ন ও রেগুলেটরি কমিশন গঠনের দাবি সরকারের কাছে রাজ্যের অভিভাবকরা বারবার তুলে ধরেছেন। অভিভাবক আন্দোলনের চাপে বাস্তবের মুখোমুখি হয়েই সরকার শিক্ষা কমিশন গড়ার কথা ভাবছে। আশাকরি সরকার দ্রুত তার ভাবনা বাস্তবায়িত করবে।”

বস্তুত, বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে পড়ুয়া নিগ্রহ বা অন্য কোনও অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নিতে পারে না সরকার। কোনও স্কুল লাগামছাড়া ফি বাড়ালেও কিছু করার থাকে না। এবার নিয়ন্ত্রক কমিশন হলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে। শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “খুব ভাল কাজ করছে সরকার। বেসরকারি স্কুলে হঠাৎ ফি বেড়ে গেলে কিছু করার থাকে না। ওরা যেভাবে চলেন সেটা অনেকটা স্বেচ্ছাচারিতা। শিক্ষার মান দেখার ব্যবস্থা নেই। তাই এই সংস্কার স্বাগত।” কলকাতার রামমোহন মিশনের প্রিন্সিপাল সুজয় বিশ্বাস বলেন, “সরকার যদি মনে করে নিয়ন্ত্রক কমিশন গড়বে গড়তেই পারে। সার্বিকভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন হলে ঠিক আছে। কিন্তু একতরফা অভিযোগ শুনে শিক্ষায় যেন কুঠারাঘাত না হয়।”

[আরও পড়ুন: আলিমুদ্দিনকে বুড়ো আঙুল! ‘হোলটাইমার’ বিধি ভেঙে উত্তর ২৪পরগনা জেলা কমিটির শীর্ষপদেই তন্ময়রা]

শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের বক্তব্য, “কমিশন বসানো মানেই অপরাধী হিসাবে ধরে নেওয়া। মাইনে বাড়ানো নিয়ে অনেক সময় সমস্যা হয়। কিন্তু বেসরকারিস্কুলগুলো কী এমন অপরাধ করেছে যে কমিশন বসানোর দরকার হল। সরকারি স্কুলগুলো কী ভাল চলছে। সেই ব্যবস্থা না করে বেসরকারিস্কুল গুলোর উপর খবরদারির চেষ্টা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। স্কুলগুলোরও স্বাধীকারে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করা হচ্ছে।” লা-মার্টিনিয়ার স্কুলের সচিব সুপ্রিয় ধর বলেন, “কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তো তারা প্রথমে স্কুল কর্তৃপক্ষকেই জানাবে। স্কুলই তো অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। বাইরের লোক এসে তো আমার সংসার কি করে চালাতে হবে তা বলতে পারে না। একজন বাবা-মা ফি-সহ সবকিছু জেনেই স্কুলে ভরতি করেন। সেখানে অভিযোগের কোনও ব্যাপার নেই।” রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “এতদিন পর্যন্ত সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েম হয়েছে। এবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে হাত বাড়িয়েছে। ফি বেড়েছে একথা ঠিক। কিন্তু সেই অছিলায় বেসরকারি স্কুলে ঢুকে আধিপত্য কায়েম করবে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement