shono
Advertisement

বুকের মধ্যে একাধিক অঙ্গ! জটিল অস্ত্রোপচার করে একরত্তির প্রাণ বাঁচাল কলকাতার হাসপাতাল

বর্তমানে বিপন্মুক্ত খুদে।
Posted: 02:33 PM Jul 16, 2021Updated: 03:05 PM Jul 16, 2021

অভিরূপ দাস: এ যেন উলটপুরাণ। এক দিক ফাঁকা। অন্যদিকে গিজগিজ করছে একাধিক অঙ্গ। মিলেমিশে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই চুপসানো পেট উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) দত্তপুকুরের শিশুর। হবেই তো। পেটে যে সমস্ত অঙ্গ থাকার কথা, তা যে ঢুকে গিয়েছে বুকের মধ্যে। বিরল অসুখ নিয়ে কলকাতার বি সি রায় শিশু হাসপাতালে এসেছিল ১৩ দিনের একরত্তি। মৃত্যুর মুখ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনলেন চিকিৎসকরা।

Advertisement

শিশুটির পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, জন্মের পর থেকেই প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট আর বমি। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাড়ির লোকেরা। দ্রুত তাকে নিয়ে আসা হয় ডা. বি সি রায় পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট ইন্সটিটিউট অফ পেডিয়াট্রিক সায়েন্সে। হাসপাতালের শিশু শল্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সুজয় পাল জানিয়েছেন, “বাচ্চাটিকে পরীক্ষা করে আমরা বুঝতে পারি এক বিরল অসুখে আক্রান্ত সে। পেট ও বুকের মাঝে একটি পর্দা থাকে। সেটিকে ডায়াফ্রাম বলে। এই বাচ্চাটির ক্ষেত্রে তা ছিল না। ফলে মায়ের জঠরে থাকা অবস্থাতেই তার পেটের অঙ্গ বুকের বাঁদিকে ঢুকে বসে ছিল। চিকিৎসা পরিভাষায় এ অসুখের নাম কনজিনিটাল ডায়াফ্রামাটিক হার্নিয়া। প্রতি ১০ হাজারে দু’জন বাচ্চার এমনটা হতে পারে।” ডা. সুজয় পালের জানিয়েছেন, দেশে ১০০টি এমন শিশু ভূমিষ্ঠ হলে ২০ জনকে মাত্র বাঁচানো যায়। অসুখের ভয়াবহতা নির্ভর করে কোন অঙ্গ কোথায় ঢুকে গিয়েছে তার উপর। এই শিশুটির বুকের মধ্যে কেবল পাকস্থলী আর যকৃৎ নয়, প্লীহা, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র সবই ঢুকে পড়েছিল। ফলে অস্ত্রোপচার ছিল অত্যন্ত জটিল। তৈরি হয় চিকিৎসকদের টিম। চিকিৎসকদের তৈরি টিমে ছিলেন, ডা. সুজয় পাল, ডা. সুদেষ্ণা হালদার, ডা. পুষ্পেন্দু, বি দেবনাথ। অ্যানাস্থেটিস্ট ডা. দীপান্বিতা মিত্র। ছিলেন শিশু মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা।

[আরও পড়ুন: বিরল ক্যানসারে বাদ অণ্ডকোষ, সন্তানের আশায় সংরক্ষিত হল নৈহাটির যুবকের বীর্য]

শিশু মায়ের পেটে থাকাকালীন তিন চার মাসের মধ্যেই তৈরি হয় ডায়াফ্রাম। এই বাচ্চাটির তা হয়নি। এদিকে বুকের বাঁদিকে সবকিছু ঢুকে পড়ায় পরিণত হতে পারেনি ফুসফুস। এহেন ফুসফুসকে হাইপোলাস্টিক ফুসফুস বলে। অন্যান্য অঙ্গের চাপে তা স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল না। পাকস্থলী অত্যন্ত বড় অর্গান। তার চাপে ফুসফুস ছোট হয়ে গিয়েছিল। টানা দেড় ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের আপাতত সুস্থ সেই একরত্তি। যেহেতু জন্ম থেকে পেটের মধ্যে কিছুই ছিল না, তাই পেটের ভিতর জায়গাও ছিল অত্যন্ত কম। অস্ত্রোপচারের একটি পর্যায়ে সে জায়গা তৈরি করেন চিকিৎসকরা। নামিয়ে আনা হয় পাকস্থলী, লিভার। কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় ডায়াফ্রাম। আপাতত চিকিৎসকদের গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে শিশুটি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগামী ৭ দিন তার সমস্ত অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা লক্ষ রাখা হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement