কৃষ্ণকুমার দাস: আর শুধু সকাল-সন্ধ্যা নয়, এবার সারাদিনের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার ‘ফুসফুস’ রবীন্দ্র সরোবর (Rabindra Sarobar)। একইভাবে সকাল ছ’টা থেকে টানা ১২ ঘণ্টা প্রবেশের অধিকার চালু হচ্ছে উত্তরের সুভাষ সরোবরেও। শহরের প্রবীণ নাগরিকদের কথা মাথায় রেখেই শীতের দুপুরে রোদ পোহাতে মঙ্গলবার এমনই মানবিক সিদ্ধান্ত নিল কেএমডিএ (KMDA)। নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধীন কেএমডিএর পথে হেঁটেই কলকাতা পুরসভাও মহানগরের অধিকাংশ পার্ক ভোর ছ’টা থেকে ১২ ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে।
[আরও পড়ুন: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে উধাও করোনা আক্রান্ত, আতঙ্কে অন্যান্য রোগীর পরিবার]
করোনা সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে রবীন্দ্র সরোবর থেকে দেশপ্রিয় পার্ক, সমস্ত উদ্যান বন্ধ করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে যোধপুর পার্কের রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুর পর ১ জুলাই থেকে রবীন্দ্র সরোবর খুলে দেওয়া হয়। ভোর ৫.৩০ থেকে সকাল ৯.৩০ পর্যন্ত প্রবেশের অধিকার দেয় কেএমডিএ। পুজোর পর সান্ধ্য ভ্রমণার্থীদের জন্য বিকেলে তিনটে থেকে তিন ঘণ্টার জন্য রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবর খুলে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুরসভাও নবান্নর নির্দেশে শুধুমাত্র প্রাতঃভ্রমণের জন্য শহরের সমস্ত পার্ক উন্মুক্ত করেছে। বাড়তি নজরদারি দিতে লেকের পাশে কেএমডিএ পৃথক অফিস চালু করেছে। সেখানে সিনিয়র সিটিজেনরা এসে দুপুরেও রবীন্দ্র সরোবর খোলার আবেদন করেছেন। প্রবীণদের আরজি ছিল, “শীতে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠায় প্রাতঃভ্রমণে দেরি হচ্ছে। তাই বেলায় জাতীয় সরোবরে প্রবেশের অধিকার চাই।” শহরের প্রবীণদের আবেদনকে গুরুত্ব দিয়ে এদিন কেএমডিএ চেয়ারম্যান তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বৈঠকে বসেন। পরে পুরমন্ত্রী জানান, “দল বেঁধে প্রবীণরা যাতে রোদ পোহাতে পারেন তাই সারাদিনের জন্য রবীন্দ্র ও সুভাষ সরোবর খুলে দেওয়া হচ্ছে। দুই লেকেই হাঁটাহাঁটি ও মুক্ত বাতাসে সবুজের মাঝে শহরবাসী যাতে বেশিসময় সময় কাটাতে পারেন তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
দুই সরোবরেই জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে হকার প্রবেশ ও প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখছে কেএমডিএ। অবশ্য সারাদিন দুই সরোবর চালুর খবরে ফের প্লাস্টিক ও হকারের দাপট বাড়বে বলে আশঙ্কা বিশিষ্ট পরিবেশবিদদের। রবীন্দ্র সরোবর মর্নিং ওয়াকার গিল্ডের আহ্বায়ক সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষের অভিযোগ,“শুধু সান্ধ্যভ্রমণেই লেকের জলে অজস্র প্লাস্টিক ও ঠান্ডা পানীয়র বোতল ভাসছে। সারাদিন খুলে দিলে ফের প্লাস্টিক দূষণের মহামারী হবে।” সরোবরে ছটপুজো বন্ধ নিয়ে মামলাকারী পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “সরোবরে হকারদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করতে বলেছিল পরিবেশ আদালত। কারণ, হকাররাই স্টোভ জ্বালিয়ে প্লাস্টিক ফেলে সরোবর ধ্বংস করছে। সারাদিনের জন্য খুলে দিলে ফের দূষণ হবে।” কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের প্রশাসক দেবাশিস কুমার রাতে জানান, “কেএমডিএর পথেই শহরের অধিকাংশ পার্ক ভোর ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা খোলা হবে। তবে দেশপ্রিয় চিলড্রেন পার্কের মতো উদ্যানগুলি আপাতত বিকেলেও বন্ধ রাখা হবে।” তবে সংক্রমণের ভয়ে শহরের কোনও সুইমিং পুল চালুতে এখনও সম্মতি নেই কেএমডিএ বা পুরসভার।