অভিরূপ দাস: এক ক্লিকে ১০। সাতদিনে ২৫।
ফেলো কড়ি মাখো তেলের সূত্রে বাধা পড়েছে কুমোরটুলি। সেখানে এখন গাঁটের কড়ি না খসালে শাটার টেপাই যাবে না। কুমোরটুলির গলির গলি তস্য গলিতে নয়া নিয়ম তাই ফেলো কড়ি তোলো ছবি।
সবে অসুরের পেশিতে গর্জন তেল লাগাতে শুরু করেছেন শিল্পী। “নড়বেন না, ওভাবেই থাকুন।” অনুরোধে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান মাখন পাল। শখের ফটোগ্রাফার ভুরু নাচায়। একখানা মারকাটারি ছবি তার চাইই চাই। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এমন একখানা ছবি দিতে পারলেই পাঁচশো লাইক। অদূরে কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃত সমিতির বিলবোর্ড ওড়ে পতপত করে। “ছবি তোলার আগে টাকা দিয়ে কুপন নিন।” খপাৎ করে ফটোগ্রাফারকে ধরেন শিল্পী। “এই আপনি টাকা দিয়েছেন?”
[জেলায় জেলায় বনেদিয়ানায় সেজে উঠছেন উমা]
পুজোর আগে কুমোরটুলিতে থিকথিক করে ভিড়। কেউ শাড়ি পরে বং লুকসে, কেউ আবার গরদের ধুতি পরে কার্তিক সেজে এসেছেন। দুর্গার পাশে পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। “ভাববেন না কেউ ঠাকুর দেখতে এসেছে। এরা হয় ফেসবুকে ছবি দেবে, নয়তো ঘরে সাজিয়ে রাখবে।” মুখ বেঁকায় শোলার দোকানের মিন্টু। ফার্স্ট ইয়ারের সোমলতা, বিকম থার্ড ইয়ারের তিতিক্ষার কাঁধে ঝুলছে হাজার পঞ্চাশি ডিএসএলআর। কী করবে? “ছবি তুলব। মা দুর্গার সঙ্গে একটা এথনিক ছবি তুলে পোস্ট করাটা এখন ট্রেন্ড চলছে।” স্মিত হেসে জানান তাঁরা। এমনই হাজারো কন্যা ভিড় করেন কুমোরটুলিতে।
সবে ত্রিনয়ন আঁকতে শুরু করেছেন রনেন পাল, দুর্গার মুখের আদল তৈরি করে রোদে শুকোচ্ছেন মৃন্ময়। এমন মোক্ষম মুহূর্ত উঠতি ফটোগ্রাফাররা ক্যামেরা বন্দি করতে চান। ঘরে এমন ‘হাটকে’ ছবি রাখতে পারলে তবেই তো জুটবে বাহবা। শখের এই ফটোগ্রাফারদের হাজারো বায়নাক্কা মেটাতে ক্লান্ত শিল্পীরাও। অসুবিধে হয়? “হবে না? রং করছি, কে একজন বলল, তুলি ধরে তিন মিনিট দাঁড়িয়ে থাকো। কাহাতক এসব সহ্য করা যায়?” খেঁকিয়ে ওঠেন মাধাই পাল।
[আমার দুগ্গা: ছোটবেলা থেকেই জমিয়ে ধুনুচি নাচে অংশ নিতাম]
ফটোগ্রাফারদের অত্যাচার কমাতে তাই নয়া নিয়ম কুমোরটুলিতে। ১০ টাকা করে টিকিট করতে হবে। তাতে অবশ্য স্রেফ একদিন ছবি তোলার পারমিট মিলবে। ২৫ টাকা দিলে ছবি তোলা যাবে সাতদিন। যদি গোটা বছর নিশ্চিন্তে ছবি তুলতে চান, কড়কড়ে পঞ্চাশ টাকার নোট বের করতে হবে। তাহলেই মিলবে সিজন পাস। সমিতির সভাপতি রঞ্জিত সরকার জানিয়েছেন, প্রতিটি পাস আলাদা রঙের। তা দেখার জন্য পাহারাদারও নিয়োগ করতে হয়েছে। অনেকেই নাকি পাস সংগ্রহ না করেই লুকিয়ে চুরিয়ে ছবি তুলছেন। ধরলেই তাঁদের ক্যামেরা বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রঞ্জিতবাবু। শুধু স্টিল ছবি নয়, নিয়ম তৈরি হয়েছে ভিডিও তোলার জন্যেও। এক ঘণ্টার ভিডিও করতে হলে দিতে হবে ৫০০ টাকা। পাস থেকে বছরে যে টাকা সংগ্রহ করা হবে তা দুঃস্থ শিল্পীদের জন্য খরচ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
The post কুমোরটুলিতে এবার টাকা না দিলে মুখ দেখাবে না দুর্গাও appeared first on Sangbad Pratidin.