সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আশ্বিণ পড়ে গেলেও মেঘাচ্ছন্ন আকাশে শরতের ঝলমলে রোদের দেখা নেই। ফলত শারদোৎসবের বার্তাও এবার অনেক দূরে। কিন্তু সত্যিই কি দূরে উমা আগমনের সময়?জঙ্গলমহলের ছবি বরং উলটো কথাই বলছে। আজ, সোমবার করম পুজো (Karam Puja)। আরণ্যক, কৃষিজীবী মানুষজনের মাটির উৎসব, প্রাণের উৎসব। ভূমি কর্ষণ করেই জীবন সচল থাকে উপজাতি সম্প্রদায়ের। তাই আদিবাসী অধ্যুষিত ছোট নাগপুর মালভূমি এলাকায় হইহই করে পালিত হয় করম উৎসব। রাঢ় বাংলার পুরুলিয়া (Purulia) ছাড়াও সংলগ্ন ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, ছত্তিশগড়ের আদিবাসীরা এই উৎসব আনন্দের সঙ্গে করম পুজোয় মেতে ওঠেন। আর এই করম, ভাদু উৎসবের হাত ধরেই উমার আগমনি সূচিত হয় বঙ্গে। এক অর্থে করম শারদোৎসবের আমেজ এনে দেয়। এবছর আবার রাজ্য সরকার করম পরবে পূর্ণ ছুটি ঘোষণা করেছে। তাই আনন্দ কয়েকগুণ বেশি কুড়মি (Kurmi), আদিবাসীদের মধ্যে।
বন-জঙ্গলঘেরা জমির যত্ন নিয়ে চাষযোগ্য করে তোলা। হোক না তা জীবন-জীবিকার তাগিদে, প্রাচীন অরণ্যবাসীরা তো এভাবেই একদিন বদলে দিয়েছিলেন অরণ্যের রূপ। অন্যতর সৃষ্টিশীলতার সুখে তাঁরা একদিন বলে উঠেছিলেন – ‘আমরা চাষ করি আনন্দে’। সেইসব অরণ্যাঞ্চলে কৃষিজীবী জনজাতির বসবাস এখন। জঙ্গলই তাঁদের মা-মাটি। আর করম উৎসব সেই উদযাপনের উৎসব, সেই আনন্দের দিন, ধরণীকে শস্য-শ্যামল করে তোলার প্রার্থনা। তিথিমতে, পার্শ্ব একাদশীর দিন হয় করম পুজো।
[আরও পড়ুন: ফের নতুন রূপে ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস! হুঁশিয়ারি চিনের ‘বাদুড়-মানবী’র]
এই পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় দিন সাতেক আগে থেকে। কংসাবতী নদীর চর থেকে মাটি সংগ্রহ করে সেখানে নানা শস্যদানা রোপণ করেন মহিলারা। তার পর সেসব অঙ্কুরিত হয়। করম পুজোর দিন তা তুলে পুজো হয়, চলে নাচগান। কুড়মি ছাড়াও আদিবাসীরা সম্প্রদায়ের মানুষজন করম উৎসবে মেতে ওঠেন। এ বছর তফসিলি উপজাতিভুক্ত (ST) হওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন কুড়মি সমাজের মানুষজন। এবারের করম পুজোতেও তার ছোঁয়া। উৎসবের মধ্যে দিয়েও তাঁরা নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরছেন। অর্থাৎ উৎসব আর আন্দোলন – এখানে চলছে সমানতালে।
দেখুন ভিডিও: