সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জগদ্ধাত্রী পুজোর নাম শুনলেই মাথায় আসে চন্দননগরের নাম। আলোকসজ্জা, সুবিশাল প্রতিমায় দর্শকদের মনে আলাদা স্থান করে নিয়েছে গঙ্গাপাড়ের এই শহর। তবে জানলে অবাক হবেন, এই পুজোর শুরু কৃষ্ণনগরে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে।
ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রস্তুতির সময় ব্রিটিশদের সহায়ক রাজাদের বন্দি করেন মিরকাশিম। সেই তালিকায় ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও তাঁর ছেলে। পরে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কৃষ্ণচন্দ্র দেখেন দুর্গাপুজো শেষ। মনমরা হয়ে পড়েন তিনি। কথিত এর পর দেবীর স্বপ্নাদেশ পান তিনি। তাঁকে জগদ্ধাত্রী রূপে পুজোর নির্দেশ দেন দেবী। সেই থেকেই শুরু কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। দিনেকালে এই পুজো রাজবাড়ির পাঁচিল পেরিয়ে শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। মনে করা হয় ১৭৬৩-৬৪ সালে দেবী হৈমন্তিকার আরাধনা শুরু জলঙ্গী পাড়ে। তবে পুজোর এই ইতিহাস নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজো শুরুর ইতিহাসের মতোই হিন্দু পুরাণেও জগদ্ধাত্রী নিয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। একটি মত অনুসারে জানা যায়, ত্রেতা যুগের শুরুতে করীন্দ্রাসুর নামে এক হস্তীরূপী অসুরকে বধের জন্য দুর্গার মতোই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের শক্তি থেকে সিংহবাহিনী, চতুর্ভুজা এই দেবীর জন্ম! দেবী জগদ্ধাত্রীর চার হাতের উপরের দুটোয় থাকে চক্র ও শঙ্খ। এবং নীচের হাতগুলোতে থাকে ধনুক ও পঞ্চবাণ!
ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু
অপরমতে, কোনও অসুর বধ নয় মহিষাসুরের বধের পর অগ্নি, পবন, বরুণ ও চন্দ্র দেবতা আত্মঅংহে ভুগতে থাকেন। দেবতাদের দর্পচূর্ণ করতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আর্বিভাব। সেখানে হস্তীকে অহংকারের স্বরূপ ধরা হয়। তাঁকেই বধ করেন দেবী। শাস্ত্রমতে, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে হয় জগদ্ধাত্রী পুজো!
ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু
কৃষ্ণনগরে পুজোর পর্ব গেল। তবে চন্দননগরে পুজো শুরু কীভাবে? জলঙ্গী পাড়ে পুজো শুরুর কিছুপরে চন্দননগরে পুজো শুরু হয়। ইতিহাসবিদদের একটি অংশ বলে কৃষ্ণচন্দ্রের জমিদারির সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলেন ফারাসিদের দেওয়ান জনৈক ইন্দ্রনারায়ণ রায়। তিনি নিজের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। অপর একটি সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারামের বিধবা কন্যা থাকতেন ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায়! সেখানেই রাজার অনুমতি নিয়ে পুজো শুরু করেন তিনি। সেই পারিবারিক পুজো এখন সর্বজনীনে পরিণত হয়েছে। দিনেকালে চন্দননগরের পুজো আজ লোকমুখে বেশি ঘোরে। কারণ, কৃষ্ণনগরে পুজো শুরু হলেও জাঁকজমকে চন্দননগর অনেক এগিয়ে। এখানকার আলোকসজ্জা জগৎ খ্যাত। যা পুজো মণ্ডপগুলোতে অন্যরূপ দেয়। এছাড়াও সুবিশাল প্রতিমা যে কারও মন কেড়ে নিতে বাধ্য।