অভিরূপ দাস: রাজকোষ গড়ের মাঠ! তবুও মাছে-মাংসে ‘খেলা হবে’ কলকাতায়। ১৬ আগস্ট ‘খেলা হবে দিবস’ উপলক্ষ্যে কলকাতায় পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল ম্যাচ হবে। সঙ্গে দেদার খাওয়া দাওয়াও। কোথাও চিকেন স্টু, কোথাও মাছ বা মাংস ভাত, অথবা চিকেন প্যাটিস। এই বিপুল আয়োজনে শুধুমাত্র কলকাতা পুরসভা এলাকার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। মেয়র পারিষদ (স্পোর্টস) দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা করে হবে ফুটবল টুর্নামেন্ট।
খেলা হবে দিবসে বেহালায় থাকছে বড় চমক। নিজের ওয়ার্ডের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী ফুটবলারদের রান্না করে খাওয়াবেন বেহালার তেরো নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রত্না শুর। শুধু খেলোয়ার নয়। খেলা দেখতে আসা দর্শকরাও তাঁর রান্না করা চিকেন স্টু চাখতে পারবেন। বরো চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর রত্না শুরের কথায়, “দশ কেজি মুরগির মাংস, দশ কেজি আলু, পর্যাপ্ত মাখন, ডিম, সবজি কিনে আনা হবে। রান্নার দায়িত্বটা আমার কাঁধেই।”
তবে সব জায়গায় খাবারের মেনু এক নয়। নারকেল ডাঙা মেনরোড এলাকার তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অনিন্দ্য কিশোর রাউত জানিয়েছেন, এখানে বসিয়ে খাওয়া নয়। খেলোয়াড়দের দেওয়া হবে খাবারের প্যাকেট। ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য ইতিমধ্যেই পাড়ার ক্লাবগুলির সঙ্গে কথা বলেছেন কাউন্সিলররা। একাধিক ওয়ার্ডে মহিলা টিমও করা হচ্ছে। কিন্তু বর্ষার মরশুমে বড় চিন্তা আকাশের মেজাজ। অনেক কাউন্সিলর তাই ইন্ডোর ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা ভাবছেন। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসীম বসু জানিয়েছেন, বৃষ্টি পড়লে এলগিন টার্ফে ইন্ডোর ফুটবল খেলা হবে।
চ্যাম্পিয়ন হলে রয়েছে প্রাইজ মানি, ট্রফিও। উত্তর কলকাতায় তরুণ সাহার ওয়ার্ডে প্রথম পুরস্কার ৫ হাজার, দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ হাজার। খেলা হবে দিবস নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় উত্তেজনা তুঙ্গে। মেয়র পারিষদ (স্পোর্টস) দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, শহরের অলিতে গলিতে অনেকেই ভাল ফুটবল খেলেন। সুযোগ পান না। মাঠে নেমে ড্রিবল করার সুযোগ দেবে খেলা হবে দিবস। রাজ্য সরকার ফি ওয়ার্ডে ১৫ হাজার টাকা করে দিচ্ছে। আদতে খরচ তার থেকে বেশিই। তবে সেই বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসবে তা স্পষ্ট নয়। পুরসভা সূত্রে খবর, খেলা হবে দিবসে ১৪৪ টি ওয়ার্ড মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা। শুধু তৃণমূল কাউন্সিলর নন। বাম কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডেও পালিত হবে খেলা হবে দিবস।
[আরও পড়ুন: ধর্মতলায় থাকবে না বাস টার্মিনাস, শুধু যাত্রী ওঠা-নামার অনুমতি]
এর মধ্যে রাজনীতি আনতে চান না বাম পুরপ্রতিনিধিরা। ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নন্দিতা রায় জানিয়েছেন, খেলাধূলার মধ্যে রাজনীতি আনা উচিত নয়। যদি আমার ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসেবে আমায় টাকা দেওয়া হয় নিশ্চই পালিত হবে খেলা হবে দিবস। বাম কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব জানিয়েছেন, তাঁর ওয়ার্ডেও খেলা হবে দিবস পালিত হবে।
উল্লেখ্য. রাজ্যের ঘাড়ে বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝা থাকা সত্ত্বেও খেলা হবে দিবসে এই বিপুল খরচ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বাম আমলের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে রাজ্যের ঋণের পরিমাণ! দেনার দায়ে ডুবে গিয়েছে বাংলার তৃণমূল সরকার! সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের প্রচার নিত্যনৈমিত্তিক। এমনকী বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের দেনার পরিমাণ নাকি বেড়ে ৭ লক্ষ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। দান, ধ্যান খেলাধুলোর পিছনে খরচ করতে গিয়ে রাজ্যের ভাঁড়ার শূন্য। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, রাজ্যের ৭ লক্ষ কোটি ঋণ হয়ে গিয়েছে, এই তথ্য ঠিক নয়। বাম আমলের ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে তাঁর সরকারকে। বলে রাখা ভাল, গত বছর ব্যাপক আর্থিক সংকটের জেরে বন্ধ হয়েছিল কলকাতা পুরসভার পেনশনও। বেতন পাচ্ছিলেন না অস্থায়ী কর্মীরাও। যদিও পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।