অর্ণচ আইচ ও শুভঙ্কর বসু: বড়দিনে ভিড় হয়েছিল পার্ক স্ট্রিটে। এবার বর্ষবরণের (New Year Eve) রাতে পার্ক স্ট্রিট ও তার সংলগ্ন এলাকায় ভিড় ঠেকিয়ে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখানোই পুলিশের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। বড়দিনের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই বর্ষবরণের রাতে পুলিশি ব্যবস্থা নিচ্ছে লালবাজার।
পুলিশের মতে, ভিড় হলে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। সেই কারণেই কীভাবে বর্ষবরণের রাতে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়, তা নিয়ে তৈরি হচ্ছে পুলিশের স্ট্রাটেজি। একসঙ্গে বেশি সংখ্যক মানুষ পার্ক স্ট্রিটে চলে এলে তাঁরা বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বাকিদের নাও ঢুকতে দেওয়া হতে পারে। তার জন্য পার্ক স্ট্রিটের ঢোকার রাস্তাগুলিতে গার্ডরেল বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এক পুলিশ আধিকারিকের মতে, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বর্ষবরণের রাতে যাতে কোনও অশান্তি না হয়, সেদিকেও রাখা হচ্ছে নজর।
মঙ্গলবার এই ব্যাপারে লালবাজারে (Lal Bazar) কর্তারা বৈঠকও করেন। তবে এই বছর বর্ষবরণে অন্য বছরের তুলনায় ভিড় কম হতে পারে বলে ধারণা পুলিশ আধিকারিকদের। যদিও গত কয়েক বছরের মতো এবারও পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশবাহিনী থাকছে পার্ক স্ট্রিটে। লালবাজারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরের থেকে এই বছর বড়দিনে তুলনামূলকভাবে ভিড় কম হয়েছে পার্ক স্ট্রিটে। কিন্তু রাতের দিকে লোক সংখ্যা বাড়তে থাকে। পুলিশের পক্ষে মাস্ক পরা ও পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বারবার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অনেকেই পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখেননি, অভিযোগ এমনই। বড়দিনের সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও খতিয়ে দেখছেন পুলিশ আধিকারিকরা। তারই ভিত্তিতে বর্ষবরণের পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ‘সময় এলে আমার বাড়িতেও পদ্মফুল ফুটবে’, জনসভা থেকে শুভেন্দুর মন্তব্যে জল্পনা]
ভিড়ের কারণে ৩১ ডিসেম্বর বিকেল থেকে পার্ক স্ট্রিটে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। জনতা জওহরলাল নেহরু রোড থেকে হেঁটে পার্ক স্ট্রিটে ঢুকে ক্যামাক স্ট্রিট বা রাসেল স্ট্রিট দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। তবে একসঙ্গে অতিরিক্ত সংখ্যক মানুষ যাতে পার্ক স্ট্রিটে ভিড় না করেন, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বর্ষবরণের রাতে প্রায় দেড় হাজার পুলিশ পার্ক স্ট্রিটে থাকবে। পুলিশ পুরো পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলকে বেশ কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করছে। বড়দিনে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। তেমনই বর্ষবরণেও প্রত্যেকটি সেক্টরের দায়িত্বে থাকছেন একজন করে ডেপুটি কমিশনার পদের অফিসার। এছাড়াও যুগ্ম পুলিশ কমিশনার পদে ও লালবাজারের অন্য কর্তারাও থাকছেন বলে জানা গিয়েছে। প্রয়োজনে ১১টার বেশি ওয়াচ টাওয়ার থেকে নজরদারি করা হতে পারে। পার্ক স্ট্রিটের উপর বেশ কিছু বহুতলের ছাদকে ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। সেখান থেকে পিসিআর ভ্যান, হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি থানা-সহ একাধিক থানার গাড়ি থাকছে। ইভটিজিং ও শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা রুখতে সাদা পোশাকের পুলিশ ও মহিলা পুলিশ থাকবে পুরো পার্ক স্ট্রিট জুড়ে। ফাঁদ পেতেই রোমিওদের ধরবেন তাঁরা। এছাড়াও মহিলা পুলিশের উইনার্স বাহিনী থাকবে সারা কলকাতাজুড়ে। পানশালা বা কোনও ক্লাব থেকে বের হয়ে রাস্তায় মদ্যপান করে বেলেল্লাপনা করলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, দুর্গাপুজো, কালীপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজোর পর এবার বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের উৎসবে ভিড় নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করল কলকাতা হাই কোর্ট। বর্ষবরণে ভিড় হওয়া উচিত কি না, এনিয়ে মামলাকারীর প্রশ্নের প্রেক্ষিতেই এদিন বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি কৌশিক চন্দর ডিভিশন বেঞ্চ মুখ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে, বর্ষবরণ উৎসবে কোথাও যাতে বাড়তি জমায়েত না হয়, তা কড়া হাতে মোকাবিলা করতে হবে। কোভিড বিধি মেনে মানুষ যাতে উৎসব পালন করেন তা নিশ্চিত করতে হবে।