নিরুফা খাতুন: প্রযুক্তির যুগে অপরাধীদেরও কাজের ধরন বদল হয়েছে। শহরাঞ্চলে চুরি, ডাকাতির মতো অপরাধ অনেকটাই কমেছে। তবে ভয় ধরাচ্ছে সাইবার অপরাধ। তাই সাইবার অপরাধীদের চিহ্নিত করতে তাদের রেকর্ড ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টারে (আই৪সি) নথিভুক্ত করে রাখা হচ্ছে। তাদের নাম, ছবি, আঙুলের ছাপ, ফোন নম্বর-সহ সব তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আই৪সি পোর্টালে পাঠিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।
লালবাজার সূত্রে খবর, সাইবার অপরাধের ধরন একেক রকমের হয়। যেমন সাইবার হামলা। জঙ্গিরা মাঝে মাঝে এই হামলা চালিয়ে থাকে। তথ্য চুরি করতেও সাইবার অপরাধীরা এই হামলা চালায়। আবার ঘরে বসে আয় করা, অনলাইন পরিষেবা, বিনিয়োগের নামে প্রতারণা, এই ধরনের সাইবার অপরাধ ইদানীং খুব বেড়েছে। অন্যান্য অপরাধীদের মতো এইসব অপরাধীদেরও গ্রেপ্তারের পর তাদের তথ্য থানায় নথিভুক্ত করে রাখা হয়। এখন সেই তথ্য সঙ্গে সঙ্গে আই৪সি পোর্টালেও আপলোড করে দেওয়া হচ্ছে। এতে অপরাধীদের চিহ্নিতকরণ করতে সুবিধা হবে। তার অপরাধের সমস্ত রেকর্ডও পাওয়া যাবে। ফলে ভবিষ্যতে ওই অভিযুক্ত কোনও অপরাধ করলে তদন্তকাজেও সুবিধা হবে।
[আরও পড়ুন: স্টেশনে আগুন জ্বালিয়ে খাবার তৈরি করলেই জেল, কঠোর সিদ্ধান্ত রেলের]
প্রযুক্তির অপব্যবহার করে নাগরিকদের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স খালি করে দিচ্ছে প্রতারকরা, অনেকের জীবনের শেষ সম্বলটুকুও লুঠ করে নিচ্ছে তারা । সাইবার অপরাধীদের খপ্পরে পড়ে সর্বহারা হচ্ছে বহু মানুষ। শহরে এই ধরনের অভিযোগ দিনে চার থেকে পাঁচটি করে জমা হচ্ছে কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলে। এই সাইবার অপরাধ দমন করা পুলিশ প্রশাসনের কাছে এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। প্রযুক্তির ব্যবহার করে পুলিশও অনেক মামলায় সাফল্য পাচ্ছে। ধরা পড়ছে অভিযুক্তরা। কিন্তু এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা সহজে জামিন পেয়ে যায়। জামিন পেয়ে আবার সেই একই কাজ করতে থাকে।
এনিয়ে কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্তা জানান, সাইবার অপরাধীদের কোনও সীমানা নেই। তারা বিশ্বের যে কোনও জায়গা থেকে নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। তাই অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের ধরা কঠিন কাজ। তার উপর প্রতারণার মতো সাইবার অপরাধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা থাকে। তাই সহজে তারা জামিন পেয়ে যায়। জামিন পেয়ে আবার একই অপরাধ করতে থাকে। সেক্ষেত্রে এদের ডেটাবেস থাকলে তদন্তকাজ সহজ হবে। যেমন কোনও অভিযুক্ত ধরা পড়লে ওই পোর্টালে গিয়ে তাঁর নাম, ফোন নম্বর বা আধার নম্বর দিয়ে সার্চ করলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আগে কোথায় কোথায় কত মামলা রয়েছে। কী ধরনের অপরাধ করেছে, তার সব তথ্য পাওয়া যাবে। যে হারে সাইবার অপরাধ বাড়ছে তাতে জঙ্গি, মাফিয়াদের মতো এই ধরনের অপরাধীদেরও ডেটাবেস থাকা খুব জরুরি বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।