অর্ণব আইচ: ২০ লাখ টাকার প্যাকেজেই পকেটে বিদেশি পিস্তল! নাগল্যান্ডের লাইসেন্সে কেনা পিস্তলই ঘুম কেড়েছে লালবাজারের। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে খবর, কলকাতায় নাগাল্যান্ডের লাইসেন্সে কেনা প্রায় ৩৫টি বিদেশি পিস্তল-সহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক অস্ত্র রয়েছে। কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে এই ধরনের পিস্তল ও অস্ত্র রয়েছে অন্তত ১০০টি। একেকজন ব্যক্তির কাছে একাধিক অস্ত্র রয়েছে, এমনও তথ্য পেয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
সম্প্রতি পার্ক স্ট্রিটে গুলি চালিয়ে এক ব্যক্তিকে আহত করার ঘটনার মূল অভিযুক্ত মহম্মদ ফইউদ্দিন ওরফে সোনা যে পিস্তল থেকে গুলি চালিয়েছিল, সেটিরও লাইসেন্স নাগাল্যান্ডের। ওই পিস্তলটির লাইসেন্স বাতিল করার জন্য কলকাতা পুলিশ আবেদন জানাবে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশকর্তাদের অভিমত, এমন কয়েকজনের সন্ধান মিলেছে, যারা রীতিমতো বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের কাছেও নাগাল্যান্ড থেকে পাওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। তাই তাদের পিস্তল জমা দেওয়া তথা আটক করে রাখার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে।
[আরও পড়ুন: মেয়ের জন্মদিনে ফেরা হল না বাড়ি, ‘অভিশপ্ত’ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস প্রাণ কাড়ল বালিগঞ্জের যুবকের]
যদিও লালবাজারের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বেআইনিভাবে পাচার বা বিক্রি হওয়া অস্ত্র সঙ্গে রাখার থেকেও নাগাল্যান্ডের চক্রের মদতে লাইসেন্স নিয়ে সঙ্গে অস্ত্র রাখা আরও মারাত্মক। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে আগে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের হাতে এই ‘আইনি’ অস্ত্র থাকার ফলে তারা সেগুলো নিয়ে ঘুরে বেড়াতেও বাধা পাচ্ছে না। সঙ্গে রাখছে লাইসেন্সের নথি। এভাবে পিস্তল দেখিয়ে অনেককে ভয়ও দেখানো হয়েছে বলে খবর এসেছে গোয়েন্দাদের কাছে।
লালবাজারের সূত্রে খবর, কলকাতা বা রাজ্যের অন্য জেলা থেকেও অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, তাদের পক্ষে অস্ত্রের লাইসেন্স জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব। সেই কারণেই মদত জোগাচ্ছে নাগাল্যান্ডের অস্ত্র চক্র। এই চক্রের এজেন্টরা ক্রেতাদের ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার প্যাকেজের অফার দেয়। ওই টাকার মধ্যে অস্ত্রের লাইসেন্স ছাড়াও ভুয়ো পরিচয়পত্র ও অনেক সময় অস্ত্র কিনিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করে ওই চক্রটি।
নিয়ম অনুযায়ী, অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে গেলে নাগাল্যান্ডের বাসিন্দা হতে হবে। অন্তত ৬ মাসের নাগাল্যান্ডের থাকতে হবে সেই ব্যক্তিকে। অস্ত্র ক্রেতাকে নাগাল্যান্ডে গিয়ে থাকা দূরের কথা, ওই রাজ্যে যেতেও হয় না। কিন্তু নাগাল্যান্ডের ভুয়ো আধার কার্ড ও অন্যান্য পরিচয়পত্র এসে যায় ক্রেতার হাতে। এর পর ওই চক্রের এজেন্টরাই ওই ভুয়ো ঠিকানার পরিচয়পত্র দিয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে।
গোয়েন্দা পুলিশের কাছে খবর, এভাবে নাগাল্যান্ডের একটিমাত্র ভুয়ো ঠিকানায় প্রায় দেড়শো অস্ত্রের লাইসেন্স তোলা হয়েছে। কলকাতা ছাড়াও বিহার, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দার কাছে পৌঁছেছে ওই অস্ত্রের লাইসেন্স। নাগাল্যান্ডের লাইসেন্স দেখিয়ে লালবাজারের অস্ত্র বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে অনেকেই কলকাতা থেকে অস্ত্র কিনেছেন। এমনকী, সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানও নাগাল্যান্ডের লাইসেন্সে অস্ত্র কিনেছে। তবে শাহজাহানের কাছ থেকে ইডি অস্ত্র উদ্ধারের পর কলকাতা পুলিশও নাগাল্যান্ডের লাইসেন্সে অস্ত্র কেনার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর হয়েছে।