লক্ষ্মীরতন শুক্লা: ভারতকে এ ভাবে সেমিফাইনালে হেরে যেতে দেখে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। টুর্নামেন্টে একটা খারাপ দিন, বৃষ্টিতে ছন্দ নষ্ট হয়ে যাওয়া চার বছরের প্রস্তুতিকে শেষ করে দিয়ে চলে গেল। নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপের বাইরে চলে গেল ভারত। কিন্তু যুক্তি দিয়ে দেখতে গেলে এটাই কি হওয়ার ছিল না? আমি কোনও দিন ক্রিকেটারদের সমালোচনায় বিশ্বাসী নই। মনে করি, খারাপ সময়ে খেলোয়াড়দের সাহস জোগানো৷ তাদের পাশে থাকাই আর একজন খেলোয়াড়ের কাজ। কিন্তু আজ সেটা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই ভারতীয় টিমটায় রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, জসপ্রীত বুমরা আর মহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়া আর আছেটা কী? দীনেশ কার্তিক যে টিমের হয়ে বিশ্বকাপ খেলে, তারা জিতবে কাপ?
আমি বুঝতে পারলাম না, গত দু’বছর ধরে নানা ভাবনাচিন্তা করেও একজনকে পাওয়া গেল না যে কি না ভারতীয় টপ অর্ডার না পারলে খেলাটা ধরবে। অথচ ছিল না কি? অম্বাতি রায়ুডু ছিল না? দেশের হয়ে প্রচুর রান করেছে রায়ুডু। ফর্মেও ছিল। অথচ ওকে না নিয়ে দীনেশ কার্তিককে নিয়ে যাওয়া হল বিশ্বকাপে! বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মতো খেলিয়ে দেওয়া হল! আর ভারত ৫-৩ হয়ে যাওয়ার পর পাঠানো হল চার নম্বরে! মহেন্দ্র সিং ধোনির আগে! চরম হাস্যকর বললেও কম বলা হয়। ধোনি ভারতীয় টিমের ফিনিশার কে বলল? ধোনি হল ভারতীয় টিমের চিরকালীন ক্রাইসিস ম্যান। অতীতে বারবার যখনই টিম বিপদে পড়েছে, টপ অর্ডার ধুয়েমুছে গিয়েছে, ধোনি পৌঁছে দিয়েছে টিমকে সম্মানজনক স্কোরে। বছর দুই আগে শ্রীলঙ্কার সুরঙ্গা লাকমলের কাছেই কেঁপে গিয়েছিল ভারত। ধোনি সে দিন একা ভারতকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দেয়। আর তাকেই কিনা এ দিন ডিকে, ঋষভ, হার্দিকের পরে পাঠাল ভারত। জানি না এই সিদ্ধান্ত কার। কিন্তু এটা জানি যে, ধোনি আজ অধিনায়ক থাকলে চার নম্বরে নিজে যেত। যে ভাবে আট বছর আগের বিশ্বকাপে নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে তুলে এনেছিল যুবরাজ সিংয়ের। আর আমার বিশ্বাস, আবারও ভারতকে জিতিয়ে ভারতকে ফাইনালে তুলে দিয়ে চলে যেত।
[ আরও পড়ুন: এরপরেও ধোনিকে দোষ দেবে ভারত! কোহলিরা কি পার পেয়ে যাবেন?]
পরিষ্কার বলছি, ধোনির বিকল্প আজও নেই। কে নেবে ধোনির জায়গা টিমে? যে সব বিশেষজ্ঞরা এত দিন বলে আসছিলেন, ধোনি মন্থর হয়ে গিয়েছে, পারছে না, সরে যাওয়া উচিত। তাদের আজকের পর বলব, আগে একটা রিপ্লেসমেন্টের নাম দিন। তার পর আপনাদের বকবকানি শুনব। ঋষভ পন্থ ভবিষ্যৎ। কিন্তু ধোনির বিকল্প কি? এ দিনও এমএসের হাফসেঞ্চুরি না থাকলে ভারত অনেক আগে হেরে যায়। রবীন্দ্র জাদেজা ওই খেলাটাই খেলতে পারে না, যা ও এ দিন খেলেছে। মার্টিন গাপ্টিলের দুর্ধর্ষ একটা থ্রো সব শেষ করে না দিলে ধোনি আজও জেতাত। বরং ধোনির পিছনে টানা পড়ে থাকা বিশেষজ্ঞদের বলব, একটু ভারতের দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলুন।
সেমিফাইনাল স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বলুন। কেন সেমিফাইনালে কেদার যাদবকে খেলানো হল না? আমাকে কী মেনে নিতে হবে, ও কার্তিকের চেয়ে বেটার প্লেয়ার? আমি জাতীয় নির্বাচকদের জিজ্ঞাসা করব, চার বছর ধরে কী করলেন আপনারা? প্রচুর মাথা খাটিয়ে দীনেশ কার্তিককে বিশ্বকাপ টিমে নিয়ে এলেন রায়ুডুকে না নিয়ে? আপনাদের তো মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠা উচিত। আরে, কার্তিক স্টেট টিম খেলার যোগ্য নয়, তাকে খেলাচ্ছে বিশ্বকাপ! রায়ুডু বা আমাদের ঋদ্ধিমান সাহাকে অনায়াসে নেওয়া যেত? তিনটে কিপার তো খেলাচ্ছ তোমরা প্লেয়িং ইলেভেনে। তাহলে যে যোগ্য তাকেই নিতে। আমার মাথায় এটাও ঢোকে না, কোন যুক্তিতে সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে মহম্মদ সামি বাদ? যা শুনলাম, ভুবনেশ্বর কুমার থাকলে ব্যাটিং লম্বা হবে ভেবে। আরও একটা অদ্ভুত যুক্তি। ভুবনেশ্বর কুমার কি শচীন তেন্ডুলকর? যে ন’নম্বরে নেমে খেলা পুরো ঘুরিয়ে দেবে? ভুবনেশ্বর বল হাতে দশ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে তিন উইকেট। সামি থাকলে দশটা রান বেশি দিন, কিন্তু উইকেট নিত পাঁচটা। আর ব্যাটে কী করল ভুবি? না প্রথম বলেই আউট! দিন কয়েক আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ গ্রুপ লিগ ম্যাচে কেন নন স্ট্রাইকিং এন্ডে ভুবনেশ্বর থাকা সত্বেও কেন ধোনি সিঙ্গলস নেয়নি, তা নিয়ে অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা সমালোচনা করেছিলেন। এদিন তো দেখা গেল ভুবনেশ্বরের দৌড়। বোঝা গেল, কেন ধোনির স্ট্রাইক রাখতে চাইছিল।
[ আরও পড়ুন: কাজে এল না ধোনি-জাদেজার লড়াই, সেমিফাইনালেই বিশ্বজয়ের স্বপ্নভঙ্গ ভারতের]
কোথাও গিয়ে মনে হচ্ছে, বৃষ্টিটাও ভারতের ছন্দ-ভাবনা কিছুটা ওলটপালট করে দিয়েছে। আমার মতে, গতকাল যদি খেলাটা হত, ভারতই জিতে ফাইনালে উঠত। কিন্তু বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়া একটা দিন, ছন্দটা নড়িয়ে দিল। জানি না, বৃষ্টিতে ম্যাচ বুধবার ভেস্তে গেলে আমরাই ফাইনালে, এই ভাবনাটাও ভারতীয় টিমের ভেতরে ভেতরে কাজ করেছিল কি না। তবে একটা কথা নিশ্চিত জানি। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল হেরেছে বলে কোহলিকে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরানো উচিত হবে না। তবে কোচ রবি শাস্ত্রী নিয়ে ভাবা যেতেই পারে। আমার মতে, দাদি (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) বা রাহুল দ্রাবিড়কে কোচ করা যেতে পারে। এই দু’জনের চেয়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে কেউ ভাল বোঝে না। এই দু’জনের চেয়ে ভারতীয় টিমকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বেটার লোক আর নেই। তবে দাদি বা রাহুল যাকেই আনা হোক, তাকে যেন পরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। পুরো চার বছর।
The post জঘন্য দল নির্বাচনেই সব শেষ! দাদি বা দ্রাবিড়কে কোচ করার দাবি লক্ষ্মীরতন শুক্লার appeared first on Sangbad Pratidin.