সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে সবার আগে নাকি ইঁদুররা পালিয়ে যায়। তা, কংগ্রেস দলটিকে দেখে প্রবাদ বাক্যটি নিয়ে সেই অর্থে আর খুব একটা সন্দেহের অবকাশ থাকে না। সিন্ধিয়া, পাইলট থেকে শুরু করে অনেকেই এখন ‘হাত’ ছেড়ে ‘পদ্মবনে’ মধু খুঁজতে ব্যস্ত। যদিও হিমশৈলের সঙ্গে দলটির টক্কর হয়েছিল ২০১৪ সালেই। সব মিলিয়ে, সময় ভাল যাচ্ছে না শতাব্দী প্রাচীন দলটির। তাই ‘আত্মসমীক্ষা’ করতে বৃহস্পতিবার সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে ভারচুয়াল বৈঠকে বসেন দলের সাংসদরা। আর সেখানেই অত্যন্ত দৃষ্টিকটূভাবে উঠে আসে দলের প্রবীণ ও নবীন নেতাদের মধ্যে কলহ। আর চার ঘণ্টা ধরে চলা তুমুল তর্ক বিতর্ক দেখলেও একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্র মনমোহন সিং।
[আরও পড়ুন: সর্বনাশা নেশা! মদ না পেয়ে স্যানিটাইজার পান করে অন্তত ৯ জনের মৃত্যু অন্ধ্রপ্রদেশে]
সূত্রের খবর, বৈঠকে মজুত ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী একে অ্যান্টনি, কপিল সিব্বল, গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, অম্বিকা সোনি ও অনেকেই। সেখানে প্রশ্ন ওঠে, রাজনীতির আঙিনায় মোদি সরকারকে কীভাবে ঘিরে ফেলা যায়? এর জবাবে মনমোহন সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের অনেকেই অভিযোগের সুরে বলেন, করোনা, চিনা আগ্রাসন, আর্থিক মন্দা-সহ বেশ কিছু ইস্যু থাকলেও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কড়া প্রতিবাদের সুর নেই দলের গলায়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও, বর্তমানের কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে মোর্চা খুলেছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর নেতৃত্বেই চলছে মোদি হটানোর পরিকল্পনা। তাই প্রবীণরা পরোক্ষে রাহুলকেই দায়ী করছেন মনে করে আসরে নেমে পড়েন নবীন নেতাদের একাংশ। ফলে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাহুল গান্ধীর সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় বিবাদ। দলের ভরাডুবির জন্য প্রবীণ নেতাদের কার্যকলাপকেই অনেকাংশে দায়ী করেছে ‘রাহুল ব্রিগেড’। নবীনদের অনেকেই দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাহুলকে ফিরিয়ে আনা হোক। শুধু তাই নয়, প্রবীণ নেতাদের কটাক্ষ করে তাঁদের আর দাবি, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ ও দ্বিতীয় UPA সরকারের নীতিগুলি খতিয়ে দেখা হোক। ২০১৪’র নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়ের জন্য সরাসরি UPA-2 সরকারকেই দায়ী করেছেন রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ট বলে পরিচিত রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব সাতাভ। দলের প্রবীণ নেতা কপিল সিব্বল ‘আত্মসমীক্ষা’র কথা তুলতেই তাঁকে মাঝপথে থামিয়েই মহারাষ্ট্র থেকে রাজসভায় নির্বাচিত এই সাংসদের সাফ বলেন, ‘আত্মসমীক্ষা হলে ২০১৪ সাল থেকে হোক।’
এদিকে, প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা তুমুল তর্ক বিতর্কের পুরোটাই নিশ্চুপ ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। কারও সপক্ষে বা বিপক্ষে একটি কথাও বলেননি তিনি। বৈঠকে সরাসরি না বললেও, ঠারেঠোরে UPA-2 সরকারের আমলে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ও তৃণমূল স্তরের কর্মীদের উপেক্ষা করার প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠলেও কোনও প্রতিবাদের কথা সোনা গেল না এই প্রবীণ নেতার মুখ থেকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, কংগ্রেস এখন জরাগ্রস্ত। শচীন পাইলট ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো যুব নেতারা সঙ্গ ছেড়েছেন। চিন, করোনা নিয়ে তর্কের বন্যা বইয়ে দিলেও নরেন্দ্র মোদির সামনে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা টিকতে পারবেন না। তাই হয়তো চুপ থেকেই অনেক কিছু বলে দিয়েছেন মনমোহন।
[আরও পড়ুন: ‘অবশেষে মুক্তি’, ৩৬০ দিন পর গৃহবন্দি দশা কাটল কাশ্মীরি নেতা সাজাদ লোনের]
The post সোনিয়ার সামনেই প্রবীণ-নবীন লড়াই, চুপ করে দেখলেন মনমোহন appeared first on Sangbad Pratidin.