রাহুল চক্রবর্তী: বঙ্গ রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির যাত্রা শুরু হল ‘ক্রান্তি প্রেস’ থেকে। ক্ষমতা থেকে তৃণমূল ও বিজেপিকে হটানোর জন্য বিপ্লবের লক্ষ্যমাত্রাও চূড়ান্ত হল। মোদ্দা কথা, সব মত পার্থক্য ঝেড়ে ফেলে এবার একসঙ্গে লড়াই করবে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। যাত্রাটা শুরু হচ্ছে আসন্ন তিন বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন দিয়ে।
ঢাক ঢাক, গুড় গুড় চলছিল দিন কয়েক ধরেই। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস কি একজোট হয়ে লড়াই করবে? তেলে-জলে মিশ খাবে? প্রশ্নটা ছিল রাজনীতিমনস্ক সচেতন মানুষ থেকে আমজনতা – সকলেরই। কংগ্রেসের একটা অংশের বক্তব্যও আবার বাম-কংগ্রেসের সমঝোতার পথে ছন্দপতন ঘটায়। কিন্তু বুধবার সন্ধেবেলা রিপন স্ট্রিটের ‘ক্রান্তি প্রেস’ থেকে বাম-কংগ্রেসের জোটের আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দিলেন দু’দলের রাজ্য নেতারা।
[আরও পড়ুন: প্রবীণ পুরকর্মীকে দিয়ে ম্যাসাজ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল তৃণমূল নেতার কীর্তি]
আগামী ২৫ নভেম্বর কালিয়াগঞ্জ, করিমপুর ও খড়গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। একজোট হয়ে লড়াই হবে, এটা প্রাথমিকভাবে ঠিক হয় বাম-কংগ্রেসের মধ্যে। এদিন তার পূর্ণতা দিতে সন্ধে ছ’টা নাগাদ বামফ্রন্টের শরিক আরএসপি’র কার্যালয় ‘ক্রান্তি প্রেসে’ হাজির হন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র ও রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। আগে থেকেই সেখানে হাজির ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ বামফ্রন্টের শরিক দলের সব নেতৃত্ব। ঘণ্টাখানেক বাম-কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ আগামীতে পথ চলা নিয়ে আলোচনা করেন। তারপরই সাংবাদিক বৈঠক করে একজোটে লড়াইয়ের কথা ঘোষণা করেন নেতারা।
বিমান বসু জানান, তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একযোগে লড়াই করবে। পাশে বসা সোমেন মিত্রও বলেন, “আর কোনও ছন্দপতন নেই। আমাদের পথ চলা শুরু হল। তৃণমূল ও বিজেপিকে হটানোর লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলা থামবে না।” বামেদের হাত ধরার ক্ষেত্রে কংগ্রেস সভানেত্রী সিলমোহর দিয়েছেন, তাও জানিয়ে দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিন আসনের উপনির্বাচনে ২-১’এ সমঝোতা হয়েছে।
আজ, বৃহস্পতিবার দু’দলই আলাদাভাবে প্রার্থী ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন বিমান বসু ও সোমেন মিত্র। খড়গপুরে কংগ্রেসের সম্ভাব্য প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডল, কালিয়াগঞ্জে ধৃতশ্রী রায় এবং করিমপুরে সিপিএমের সম্ভাব্য প্রার্থী বাবুসোনা সরকার। সমঝোতা যখন হয়েছে, তখন দু’দলের যৌথ কর্মসূচিও হবে বলে ঘোষণা করা হয় এদিনের বৈঠকের পর। তিন উপনির্বাচনের আসনভিত্তিক একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি তৈরি হচ্ছে। পরে অন্যান্য বিধানসভা ও রাজ্যভিত্তিক হবে বলেও জানানো হয়েছে। বিমানবাবু জানিয়েছেন, “বাম-কংগ্রেসের আলাদা প্রচার ও যৌথপ্রচার দু’টিই হবে। বামফ্রন্টের সভায় কংগ্রেসের প্রতিনিধি এসে বক্তব্য রাখবেন। আর কংগ্রেসের সভায় বাম প্রতিনিধি পাঠানো হবে। দ্রুত নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে।”
[আরও পড়ুন: কড়েয়ার ‘কোটিপতি’ অটোচালক খুন, সন্দেহের তালিকায় দ্বিতীয় স্ত্রী]
শুধুমাত্র নির্বাচনী প্রচার নয়, এনআরসি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ছাঁটাই-সহ একাধিক ইস্যুতে দু’দল যৌথ আন্দোলনে নামছে বলে জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান। নাম না করে আবদুল মান্নানের প্রসঙ্গ টেনে সোমেন মিত্র বলেন, “কংগ্রেসের মধ্যে কেউ কোনও বিষয়ে মত দিতে পারেন। কিন্তু সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত, স্বৈরাচারী তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে বামফ্রন্টের সঙ্গে থাকবে কংগ্রেস।” তবে বিধানসভা উপনির্বাচনের পরে বাম—কংগ্রেসের সমঝোতা কতদূর বজায় থাকে, সেদিকেই এখন নজর।
The post হাত ধরল কাস্তে, তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট appeared first on Sangbad Pratidin.