গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: আশঙ্কা বাড়িয়ে অত্যন্ত সংকটজনক প্রবীণ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee)। কোভিড এনসেফেলোপ্যাথিতে (Covid Encephalopathy) মস্তিষ্ক স্বাভাবিক কাজ করছিল না তাঁর। এবার কিডনির সমস্যাতেও কাবু বাঙালির ম্যাটিনি আইডল। মঙ্গলবার থেকে তাঁর রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি শুরু হয়েছে। কী এই থেরাপি? সাধারণত দুটি কিডনি স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ করে দিলে এই থেরাপির প্রয়োজন হয়। হেমোডায়ালিসিস, হেমোফিল্টারেশন এবং হেমোডায়াফিল্টারেশন-এর মাধ্যমে রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করা হয়। তাতেও কাজ না হলে কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন।
আপাতত সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশনে রয়েছেন অভিনেতা। রাতে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছে না। চিকিৎসকদের সবচেয়ে উদ্বেগে রেখেছে তাঁর আচ্ছন্ন ভাব, যা কোনওভাবে কাটছে না। বেড়ে চলেছে ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিন। সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশনেও তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন রয়েছে ৯৫ শতাংশ। ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণও রয়েছে তাঁর শরীরে। এই মুহূর্তে মস্তিষ্কের স্নায়ুর সচেতনতা অর্থাৎ গ্লাসগো কোমা স্কেলে সূচক রয়েছে ৯-এর কাছাকাছি। যা আতঙ্ক বাড়িয়েছে চিকিৎসকদের। সোমবার প্রবীণ অভিনেতার শরীরে ব্লাড কাউন্ট ওঠানামা করছিল। তবে মঙ্গলবার তা স্বাভাবিক জায়গায় এসেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ব্লিডিং হচ্ছিল। তবে আপাতত তা বন্ধ করা গিয়েছে। সবমিলিয়ে পঁচাশি বছরের অভিনেতার শারীরিক অবস্থাকে ‘হিমোডায়ানামিক্যালি স্টেবল’ বলছেন চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন: ইস্ট-মোহন লড়াই থেকে মিষ্টি দই, বাঙালিয়ানায় পরিপূর্ণ অমিতাভ বচ্চনের বিজয়ার পোস্ট]
টানা ২২ দিন ধরে বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অভিনেতা। করোনা (CorinaVirus) আক্রান্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়। প্লাজমা থেরাপির পর তাঁর করোনা (COVID-19) রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। সেইসঙ্গে চিকিৎসাতেও সাড়া দিতে থাকেন তিনি। কিন্তু আচমকাই তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটজনক হয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সৌমিত্রর শরীরে সমস্যা বাড়িয়েছে কোভিড এনসেফ্যালোপ্যাথি। তারপর থেকেই তাঁর চেতনা ক্রমশ কমতে শুরু করে।
[আরও পড়ুন: ‘নো এন্ট্রি’র নির্দেশ সত্ত্বেও মণ্ডপে ঢুকে অঞ্জলি, বুধবারই আইনি নোটিস পাচ্ছেন নুসরত-সৃজিতরা]
প্রবীণ অভিনেতার এক্স রে রিপোর্টে নতুন প্যাচ দেখা দিয়েছে। বয়স এবং কো-মর্বিডিটি সৌমিত্রর চিকিৎসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রক্তে হিমোগ্লোবিন এবং অনুচক্রিকার পরিমাণ কম থাকায় শুরু করা হয়েছে ব্লাড ট্রান্সফিউশন। সেই সঙ্গে চিকিৎসকদের চিন্তায় রেখেছে তাঁর শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের তারতম্য। নতুন করে স্নায়ুরোগ সংক্রান্ত জটিলতা দেখা না গেলেও প্রবীণ শিল্পীর উদ্বেগজনক স্নায়বিক অবস্থা নিয়ে ঘোর চিন্তায় চিকিৎসকরা। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম করের বক্তব্য, আশি পেরিয়ে গিয়েছেন অভিনেতা। এমতাবস্থায় আচ্ছন্ন চেতনায় মস্তিষ্কে সংক্রমণের অভিঘাতে রোগীর আনুষঙ্গিক রোগগুলিই বিপজ্জনক।