রোজ ঘুম আসে না। মনে হয় ওষুধ চাই! আয়ুর্বেদে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর টোটকা জানালেন জে. বি. রায়. স্টেট আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক ডা. শ্রীকান্ত পণ্ডিত। শুনলেন জিনিয়া সরকার।
ঘুম জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা শারীরিক, মানসিক ও স্নায়বিক অনুভূতিকে বিশ্রাম ও শিথিলতা প্রদান করে। আয়ুর্বেদ সংহিতানুসারে আহার, নিদ্রা ও ব্রাহ্মচর্যকে জীবনের তিনটি উপস্তম্ভ বলা হয়, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে নিদ্রা যা বয়স, শারীরিক ও মানসিক প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। অপরিমিত বা ঘুম না হওয়াকে অনিদ্রা বলে। এর ফলে রাতে ঘুম আসে না, সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায়, অস্থিরতা, মানসিক ও শারীরিক অবসাদ, কাজ করতে ভাল না লাগা, চোখ জ্বালা, ক্লান্তি, মাথা ধরা, মাথা ব্যথা, তন্দ্রা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না করলে এর থেকে বহু জটিল মানসিক ও শারীরিক রোগের উৎপত্তি হয়।
আয়ুর্বেদে নিরাময় সম্ভব
রোগীর সমস্ত জীবনশৈলীর উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়। চটজলদি ট্যাবলেট বা সিরাপের মতো ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিলেই নিদ্রাহীনতা সরানো সম্ভব, এটা ভুল ধারণা। এতে ওষুধের উপরে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দেখা দিতে পারে। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বিভিন্ন উপক্রম দ্বারা চিকিৎসা করা হয়।
বাহ্য উপাচার: অভ্যাঙ্গ (ওষধি তেল দিয়ে মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত পুরো শরীর আস্তে আস্তে ম্যাসাজ), মর্দন (ওষধি তেল দিয়ে মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত পুরো শরীর জোরে জোরে ম্যাসাজ), শিরোধারা (কপালে ঔষধি তরল পদার্থের ধারা), শিরোলেপ (মাথায় ঔষধি দ্রব্যের প্রলেপ)।
অভ্যন্তর উপাচার: একক দ্রব্য ও ওষুধ যোগ।
মানসিক উপাচার: পছন্দমতো বিষয় গ্রহণ, পছন্দমতো শব্দ গ্রহণ (যেমন পছন্দের গান), পছন্দমতো গন্ধ গ্রহণ (যেমন পছন্দের সুগন্ধি)।
আহার উপাচার: সহজপাচ্য আহার যেমন, পুরনো শালি ধানের চাল, মাসকলাই, যুস, জঙ্গল মাংসরস, গোদুগ্ধ, ক্ষীর, দই, মিছরি ইত্যাদি।
[আরও পড়ুন: ঘামের গন্ধই টানে ডেঙ্গুর মশাকে! দিনে দু’বার স্নানের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের]
মানতে হবে
মনোরম ও পরিষ্কার বিছানা, প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, রাত জেগে কাজ না করা, সাধারণ শারীরিক পরিশ্রম করা, ঘুমানোর সময় হালকা গান শোনা, ঘুমের আগে ১০-১৫ মিনিট ধ্যান, হাত-পা ভাল করে ধুয়ে নেওয়া, চা-কফি-মদ্যপান না করা, ঈষৎ উষ্ণ দুধ পান করা।
আয়ুর্বেদিক একক দ্রব্য
অশ্বগন্ধা- চূর্ণ ৩ গ্রাম দিনে ২ বার মিছরি ও ঘৃতের সঙ্গে খাবার আগে সেবন।
জটামাংসীচূর্ণ- ৫০০ মি.গ্রা. – ১ গ্রাম দিনে ২ বার দুধের সঙ্গে খাওয়ার পরে সেবন।
বচঃ চূর্ণ – ৫০০মি.গ্রা. – ১ গ্রাম দিনে ২ বার দুধের সঙ্গে খাওয়ার পরে সেবন।
ব্রাহ্মীচূর্ণ – ১-২ গ্রাম /স্বরস-১০ মি. লি. চিনি ও দুধের সঙ্গে সেবন। n থানকুনি- ১-২ গ্রাম / ১০ মি. লি. ২ বার চিনি ও দুধের সঙ্গে সেবন
শঙ্খপুষ্পী- ১-২ গ্রাম / ১০ মি. লি. ২ বার চিনি ও দুধের সঙ্গে সেবন n তগর – চূর্ণ ২-৩ গ্রাম দিনে ২ বার জল ও দুধের সঙ্গে সেবন।
শাস্ত্রীয় ঔষধ
ব্রাহ্মীবটি, সর্পগন্ধা বটি, মানসমিত্রবটকম, স্মৃতিসাগররস, বাতকুলান্তকরস, ব্রাহ্মীরসায়ন, ব্রাহ্মীঘৃত, চিন্তামণিচতুর্মুখ ইত্যাদি। এই সব ওষুধ রোগ ও রোগীর অবস্থা বিচার করে চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উচিত।