স্টাফ রিপোর্টার: ডেঙ্গুর দোসর হেপাটাইটিস। অন্তত হাসপাতালে ভর্তি বেশিরভাগ রোগীর এমন উপর্সগ, বলছে স্বাস্থ্য দফতর। একই অভিমত চিকিৎসকদেরও। জ্বর কমেছে। গা ব্যথাও নেই। বেশ ঝরঝরে ভাব। পাঁচদিন পর হঠাৎ অসহনীয় পেটব্যথা। সঙ্গে পেট খারাপ। বিসি রায় শিশু হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, এম আর বাঙুর বা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এমন রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। অবস্থা দেখে বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে পেয়েছেন রোগী হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। কেন এমন সমস্যা? চিকিৎসকদের অভিমত, করোনার মতো ডেঙ্গু ভাইরাসের বিভিন্ন প্রজাতি বা স্ট্রেন আছে। একজন রোগী ডেঙ্গুর যে স্ট্রেনে আক্রান্ত হবেন, সুস্থ হওয়ার পর সেই স্ট্রেনের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার যদি ওই ব্যক্তি ডেঙ্গু ভাইরাসের অন্য স্ট্রেনে আক্রান্ত হন তবে কিন্তু সেই স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা আর কাজ করবে না। চার-পাঁচদিনের মাথায় জ্বর কমবে ঠিকই। কিন্তু ডেঙ্গুর সেই স্ট্রেন ডেকে আনে হেপাটাইটিসের ভাইরাসকে। ফল যা হওয়ার তাই। রোগীর পেটে জল জমতে শুরু করে।
[আরও পড়ুন:ব্রণর সমস্যা কমাতে পারে গর্ভনিরোধক ওষুধ! কী বলছেন গবেষকরা?]
চিকিৎসকদের অভিমত, এটা ইমিউনোলজিক্যাল সমস্যা। দেখা যায়, প্রথমবার ডেঙ্গু হলে কিন্তু এমনটা হয় না। কারণ, শরীরের মধ্যে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমিউনো হেমাটোলজির অধ্যাপক ডা. বিপ্লবেন্দু তালুকদারের কথায়, ‘‘ডেঙ্গুর চার ধরনের স্ট্রেন অাছে। দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার অন্য কোনও ডেঙ্গুর স্ট্রেন শরীরকে আক্রমণ করে, তখনই শুরু হয় সমস্যা।’’ বিপ্লবেন্দুবাবুর কথায়, ডেঙ্গু ভাইরাসের সফট টার্গেট লিভার। অর্থাৎ একাধিকবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে এমন সমস্যা হতে পারে। সেই সময় রোগীর লিভারের যত্ন নিলেই সমস্যা মিটে যায়।
তবে ঘটনা হল, লিভারের সমস্যার সঙ্গে আবার কিছু রোগীর সেই সময় প্লেটলেট কমতে শুরু করে। তাই একাধিক রোগের চিকিৎসা একইসময়ে করতে হয়। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. আশিস মান্নার কথায়,‘‘হেপাটাইটিসের ফলে লিভার থেকে প্রচুর পরিমাণে উৎসেচক ক্ষরণ হতে শুরু করে। তাই রোগীর স্বাভাবিক খাবার হজমের ক্ষমতা কমে যায়। এই সময়ে রোগীকে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অর্থাৎ জলভাত বা হালকা ঝোলভাত খেতে হবে। প্রচুর জল খেতে হবে। দেখতে হবে রোগীর শরীর থেকে রক্তপাত হচ্ছে কি না? টানা বিশ্রাম নিতে হবে। পেটে চাপ পড়ে এমন কোনও কাজ করা উচিত হবে না। অন্যথায় প্রাণসংশয় হতেই পারে।’’ একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন,‘‘ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ার পর থেকে টানা অাটদিন পুরো বিশ্রামে থাকতে হবে রোগীকে। মনে রাখতে হবে জ্বর নেই মানে ডেঙ্গুমুক্ত, এমনটা কখনওই নয়।’’