স্টাফ রিপোর্টার: এসএসকেএমের মুকুটে নতুন পালক। স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের বিশেষ ক্লিনিকাল ট্রায়ালে বাংলার এই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকে বেছে নিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাজারে এনেছে ছয় ইঞ্চির একটি যন্ত্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করে স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা যাবে। দেশের সমস্ত হাসপাতালকে পিছনে ফেলে এই গ্লোবাল ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অংশীদার হয়েছে এসএসকেএম।
জানা গিয়েছে, এসএসকেএমে ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার, ডা. পার্থ বসুর নেতৃত্বে শুরু হয়েছে ক্লিনিকাল ট্রায়াল। এর আগে এই ট্রায়ালের একটা অংশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল মালাবার ক্যানসার সেন্টারে। তবে সেটা ভ্যালিডেশন স্টাডি। কিন্তু ক্লিনিকাল ট্রায়াল এসএসকেএমে প্রথম। এনিয়ে ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, এই ট্রায়ালের মূল উদ্দেশ্য নন রেডিওলজিস্ট অর্থাৎ যাঁরা রেডিওলজিস্ট নন, তেমন চিকিৎসককে দিয়ে আল্ট্রাসাউন্ড করিয়ে ক্যানসারের নির্ণয় করা। দেশে তো বটেই বাংলায় উত্তরোত্তর বাড়ছে স্তন ক্যানসার। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রতি ৮ জনের মধ্যে এক জন নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। বাদ যাচ্ছেন না পুরুষরাও। দেশের পরিসংখ্যানও বেশ উদ্বেগজনক। দেশে প্রতি ২২ জন মহিলার মধ্যে ১ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। বাংলার কোনায় কোনায় অত রেডিওলজিস্ট নেই। ফলত ক্যানসার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এসএসকেএমের ক্লিনিকাল ট্রায়াল সফল হলে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
কীভাবে কাজ করবে নতুন যন্ত্র? এসএসকেএমের সার্জন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, গ্রামের কোনও একজন মহিলা হয়তো স্তনে হাত দিয়ে কোনও মাংসপিণ্ডের অনুভূতি পেলেন। সেই টিউমারটা বিনাইনও হতে পারে। ক্যানসারও হতে পারে। এবার ওই মহিলাকে শহরে আসতে হবে না। বাড়ির কাছে ব্লক লেভেলের চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে ওই যন্ত্রের মাধ্যমে আল্ট্রাসাউন্ড করতে পারবেন। আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইসটা ফোনের সঙ্গে ইন্টারনাল ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। ফোনের মধ্যেই দেখা যাবে এই টিউমারটা সন্দেহজনক নাকি স্রেফ নিরীহ টিউমার। যদি দেখা যায় ক্যানসারের কোষ রয়েছে তখন ব্লক লেভেল থেকে হায়ার সেন্টারে রেফার করা হবে ওই মহিলাকে।
প্রথমদিকে নন রেডিওলজিস্ট সমস্ত চিকিৎসক এই যন্ত্র ব্যবহার করবেন। ট্রায়াল সফল হলে আগামীতে নার্সিং স্টাফদের হাতেও এই বিশেষ যন্ত্র তুলে দেওয়া হবে। ট্রায়াল শুরু হয়ে গিয়েছে। খুব শিগগির ডায়মন্ড হারবারে যাবেন এসএসকেএমের চিকিৎসকরা। যাওয়া হবে এম আর বাঙুর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। এসএসকেএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৫-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে ট্রায়াল। ইতিমধ্যেই ৭০ জন রোগীর রিপোর্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ব্যবস্থায় এই মূহূর্তে ২৮ টি স্পোক রয়েছে। রয়েছে নটি হাব। উন্নতমানের পরিকাঠামো যুক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে বলা হচ্ছে ‘হাব’। তার অধীনে থাকছে অপেক্ষাকৃত কম পরিকাঠামোযুক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেইগুলোকে বলা হচ্ছে স্পোক। হাব অ্যান্ড স্পোক মেথড ব্যবহার করেই চলবে এই ট্রায়াল।