ডেঙ্গুর চাপে আড়ালে থাকছে শরীরের অন্য সংক্রমণ। তাতেই দেখা দিচ্ছে বিপত্তি। একটা সামলাতে গিয়ে অন্যটা অবহেলা নয়। বয়স্কদের এটাই বেশি হচ্ছে, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস আর কী বলছেন, পড়ুন।
এই সময়টা প্রতি বছরই ডেঙ্গুর (Dengue) প্রকোপ বাড়ে। এবছর তার অন্যথা হয়নি। তবে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাটা বেশ বেশি অন্য বারের তুলনায়। বিশেষ করে আগস্ট মাসের পর থেকে সংখ্যাটা লাফিয়ে বাড়ছে। আর চিন্তার বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য সংক্রমণের আক্রমণ। একদিকে ডেঙ্গু, সেই রোগীরই আবার আগে থেকে শরীরে লুকিয়ে অন্য সংক্রমণ। তাই জ্বর সারাতে গিয়ে বেশ ফ্যাসাদে পড়তে হচ্ছে সব চিকিৎসকদেরই।
ঠিক কী হচ্ছে?
যদি রোজ ১০ জন ডেঙ্গুর রোগী আসে, তার মধ্যে ৩-৪ জনেরই দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু ছাড়াও অন্য সংক্রমণ শরীরে রয়েছে। বিশেষত বয়স্কদের এই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। তাই ডেঙ্গুর ওষুধ খাওয়ার পরও জ্বর কমছে না।
কী রকম? হয়তো দেখা যাচ্ছে মহিলাদের ইউরিন ইনফেকশন রয়েছে, কারও নিউমোনিয়া, কারও ইনফ্লুয়েজ্ঞা কিংবা টাইফয়েড। তার সঙ্গে জুটেছে ডেঙ্গু। প্রথম চোটে সেটা বোঝা বেশ ঝক্কির। প্রথমে জ্বর দেখে ডেঙ্গু টেস্ট করানো হলে, তখন রিপোর্টে ডেঙ্গু পজিটিভ আসার পরই শুরু হচ্ছে ট্রিটমেন্ট। টনক নড়ছে অনেক পড়ে।
যখন জ্বর কমছে না রোগীর। কারণ ডেঙ্গু হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার দরকার নেই, অন্যদিকে ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়া অবধি জ্বর কমবেই না। এই কারণেই ডেঙ্গুর ওষুধ চললেও জ্বর কমছে না। তখন রোগীর আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা পড়ছে ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশনও রয়েছে। এই দুই শত্রুর যৌথ আক্রমণে রোগীর অবস্থা সংকটে পরিণত হচ্ছে। এই অন্য সংক্রমণের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই অধিকাংশ ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।
[আরও পড়ুন: ফিট থাকতে রোজকার ডায়েটে থাকুক বাজরা, কীভাবে খাবেন? জেনে নিন বিশেষজ্ঞর মত]
কখন বুঝবেন?
ডেঙ্গু নিরাময়ে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকা নেই। তাই ডেঙ্গু ট্রিটমেন্ট চলাকালীন নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা যা থেকে সেপসিসের ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে (রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়া) বা অন্য কোনও সংক্রমণের জ্বর থাকলে সেটা কমে না। তখন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রয়োজন। তাই অনেকের ক্ষেত্রেই জ্বর সারছে না। এটাই প্রথম সতর্কতা।
প্রাথমিক ভাবে এনএস ওয়ান পজিটিভ। যার অর্থ রোগীর ডেঙ্গু হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কিছু রোগীর অ্যান্টিবডি পাওয়া যচ্ছে না। এটাই অ্যালার্মিং। তখনই বুঝতে জ্বরের আড়ালে শুধু ডেঙ্গু নয়, অন্য কিছুও রয়েছে।
ডেঙ্গু কিন্তু তার প্রোক্যালশিটোলিন বেশি হলে তখন বুঝতে হবে একজনের ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য সংক্রমণ বা ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন রয়েছে।
এমনকী, এই সময় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাটাও বেড়েছে। ডেঙ্গু না হয়ে ম্যালেরিয়া কি না সেটাও টেস্ট করে দেখা দরকার।
তাই শুধু ডেঙ্গু টেস্ট নয় সকলকে একটা কথাই বলব, এখন জ্বর হলে শুধু ডেঙ্গু টেস্ট নয়, সঙ্গে ইউরিন কালচার ও ব্লাড কালচার টেস্ট করে সবসময় দেখা উচিত। তাহলেই
অন্য সংক্রমণ থাকলে সেটা তখনই ধরা পড়বে। ট্রিটমেন্টেও সুবিধা ও রোগী সুস্থ হবেন দ্রুত। তা না হলে একটা ট্রিটমেন্ট করতে গিয়ে অন্যটার ট্রিটমেন্ট হয় না। যখন ধরা পরে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।
লক্ষণ দেখলেই ব্যবস্থা নিন
বমি, অসহ্য পেটের যন্ত্রণা, জ্বর বারবার আসতে থাকবে, প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও ডায়েরিয়ার লক্ষণ থাকলে সতর্ক হোন।
ডেঙ্গুর ওষুধ খাওয়ার পাঁচদিন পরও জ্বর যদি না কমে তখনই সিআরপি (সি রি-অ্যাকটিভ প্রোটিন) টেস্ট করে দেখতে হবে।
আর, প্রোক্যালশিটোনিন টেস্ট করে ব্যাকটিরিয়া শরীরে রয়েছে কি না সেটা নির্ণয় করা জরুরি।