রমেন দাস: বিপদ বাড়ল অপরাধীদের! এবার ‘ক্রিমিনাল’ ধরতে নয়া ফাঁদ পাতল কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)! সূত্রের খবর, শহর জুড়ে ৬০ এর বেশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সিসিটিভি ক্যামেরা (CCTV camera) বসিয়েছে প্রশাসন। যার উদ্দেশ্যই হল, অপরাধীর মুখ দেখে তাকে শনাক্ত করা।
ঠিক কী করা হয়েছে আসলে? কলকাতা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, শহরের ‘স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট’, জনবহুল এলাকায় এফআরএস অর্থাৎ ফেসিয়াল বা ফেস রিকগনিশন (FRS- Face Recognition Camera) জাতীয় ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ‘নির্ভয়া’ প্রকল্পে কেনা একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার মতোই আপাতত বেশকিছু এফআরএস ক্য়ামেরা বসানো হয়েছে শহরে। যার কাজ, ভিড়ের মধ্যেই নিরন্তর ছবি তোলা। আর এই ছবিই নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পুলিশের কাছে থাকা ‘ক্রাইম রেকর্ডে’র সঙ্গে ‘ম্যাচ’ করাবে তথ্য। আর এই ‘ফাঁদে’ই ধরা পড়বে অপরাধী। দাবি, এই গোটা প্রযুক্তিতে কাজে লাগবে এআই (AI) অর্থাৎ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence)।
দেখুন ভিডিও:
এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন ডেপুটি কমিশনার সত্যজিৎ ব্যানার্জি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে জানান, ”এফআরএস ক্যামেরা অত্যন্ত শক্তিশালী। অপরাধ কমাতে সাহায্য করবে। যা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শহরের নিরাপত্তা বাড়াতে পারে আরও।” প্রাক্তন ওই পুলিশকর্তার আরও দাবি, ”শহরে দুর্গা পুজোর (Durga Puja) সময় প্রবল ভিড় জমে। সেখানে একটা চিন্তা থাকে শিশুদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে! সেক্ষেত্রেও এই ধরনের ক্যামেরা কাজে আসতে পারে।” প্রায় একই মত প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম আচার্যের। তিনি জানান, ”কলকাতা পুলিশ এর আগেও নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। এই ক্য়মেরা মূলত, ইজরায়েলি প্রযুক্তিতে তৈরি বলে জানি। যা সত্যিই অপরাধীকে শনাক্ত করতে আরও বেশি কার্যকরি। কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। তা না হলে কিছুই হবে না!” এর সঙ্গেই তাঁর বার্তা, ”সচেতন থাকুন। বিপদে পড়লে কলকাতা পুলিশের দেওয়া হেল্পলাইন নম্বরে কল করুন।”
[আরও পড়ুন: কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে অঝোরে বৃষ্টি, সপ্তাহান্তে পণ্ড হবে পুজোর শপিং?]
কিন্তু এই নয়া প্রযুক্তির সিসিটিভি ক্য়ামেরার সঙ্গে কী সম্পর্ক রয়েছে এআইয়ের? সাইবার বিশেষজ্ঞ অভিষেক মিত্রের কথায়, ”এই সিসিটিভি ক্যামেরা ছবি তুলবে। সকলের ছবি উঠবে তার মাধ্যমে। কিন্তু এর পরের কাজটাই করবে এআই!” কীভাবে? অভিষেকের বলছেন, ”নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অপরাধীদের তথ্য নির্দিষ্ট স্থানে জমা হচ্ছে। তা দেশব্যাপী অথবা বিশ্বজুড়েও হতে পারে! কিন্তু এই তথ্য এবং ওই ক্যামেরায় ওঠা মুখের ছবি মিলছে কি না, এই বিষয়ের দিকেই নজর দেবে এআই। যা দুই দিককে মিলিয়ে দেওয়ার কাজটাই করবে। তথ্য অনুযায়ী, নির্দিষ্ট করে অপরাধীকে চিহ্নিত করে দেবে।”
প্রসঙ্গত, ওই ক্যামেরাগুলির মাধ্যমে আসা ছবির জন্য নির্দিষ্ট সার্ভারে থাকবে ‘ক্রিমিনাল রেকর্ড’ সম্বলিত ডাটাবেস (Data Base of Criminal Record)। থাকবে অপরাধীদের ছবিও। এই ক্যামেরা অভিযুক্ত বা দৃষ্কৃতীর সন্ধান পেলে, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংকেত পাঠাবে। যার ফলে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিতকরণ দ্রুত হবে বলেও দাবি প্রযুক্তিবিদদের। প্রাক্তন পুলিশ অধিকর্তা থেকে শুরু করে সাইবার বিশেষজ্ঞ। প্রত্যেকেই বলছেন, আরও নজরদারি প্রয়োজন, যে হারে অপরাধ বাড়ছে, তাতে পরিকল্পিত অপরাধ রুখতে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া অবশ্যম্ভাবী।
[আরও পড়ুন: ‘ফোন ধরছো না কেন?’, বিধানসভায় পা রেখেই পরিষদীয় মন্ত্রীর ধমক খেলেন নির্মলচন্দ্র রায়]
উল্লেখ্য, বহুকাল ধরেই শহরের নিরাপত্তা বাড়াতে একাধিক উদ্য়োগ নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা শহর। বসানো হয়েছে বিভিন্ন রকমের সিসিটিভি ক্যামেরা। যার মধ্যে অন্যতম, ইনফ্রারেড বুলেট ক্যামেরা, স্পিড ডিটেকশন অ্যান্ড নম্বর প্লেট স্ক্যানিং ক্যামেরা। দাবি, এবার সেই আবহেই বসানো হয়েছে ফেস রিকগনিশন সিসিটিভি ক্যামেরা (CCTV Camera)। দুষ্কৃতীদের (Criminal) বাগে আনতে আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে পুলিশ। যদিও পুলিশের আর একটি সূত্রের দাবি, ”এবার নয়, এই ফেস রিকগনিশন টেকনোলজির (Face Recognition Technology) ব্যবহার শুরু হয়েছে আগেই!” যদিও কলকাতা পুলিশ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম যুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বসেছে সম্প্রতি, এই খবরেই সিলমোহর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।