ত্বকে এমন দাগ কেন হয়? সবক্ষেত্রেই কারণ এক নয়। কী করা উচিত, কী একেবারেই করবেন না। জানালেন ডার্মাটোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. রথীন্দ্রনাথ দত্ত। শুনলেন সোমা মজুমদার
ত্বকে কোনও রকম দাগ-ছোপ থাকলে সেটা মোটেই শোভা পায় না। অনেকে অল্প খুঁতও ঠিক করতে মরিয়া আর কেউ কেউ ত্বকের ছোপ নিয়ে তেমন গা-ও করে না। এই অবহেলা করা স্বভাবের জন্য অল্প সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় দ্রুত। তখন অনেক রোগই সারিয়ে তোলা কঠিন। ত্বকে অল্প-বেশি কালো ছোপ হলে বিষয়টা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।
কালো ছোপের কারণ
ট্যানিং – সূর্যের তাপ বা রোদের ঝলকানিতে দীর্ঘসময় থাকলে শরীরের অনাবৃত অংশের ত্বক কালচে হয়ে য়ায়।
মানুষের ত্বকে মেলানোসাইট নামক এক ধরনের কোষ থাকে যা থেকে মেলানিন নামে রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয়। কার গায়ের রং কেমন হবে সে বিষয়ে মেলানিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ত্বকে কত মেলানোসাইট আছে এবং কতটা মেলানিন তৈরি হচ্ছে তার উপরই গায়ের রং-এর ধরন নির্ভর করে।
মেচেতা – সাধারণত মেচেতা গালে হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে অন্য কিছু জায়গাতেও হতে পারে। কালো, ধূসর কিংবা বাদামি রঙের ছোপ ছোপ মেচেতার দাগ দেখা যায়। মেচেতা প্রধানত মেয়েদের বেশি হয়। নিয়মিত হরমোনের ওষুধ বেশিদিন খেলেও অনেক সময় মেচেতা হতে পারে।
পোস্ট ইনফ্ল্যামেটরি হাইপার- পিগমেন্টেশন – কোনও জায়গায় প্রদাহ হলে সেই নির্দিষ্ট জায়গার চামড়া অনেক সময় কালো হয়ে যায়। একেই পোস্ট ইনফ্ল্যামেটরি হাইপার-পিগমেনটেশন বলে। যেমন ব্রণ, ফোড়া ইত্যাদি সেরে গেলেও ত্বকে এই ধরনের কালচে ভাব দেখা যেতে পারে।
[আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে অক্সিজেনে ঘাটতি মারাত্মক বিপদ ঘটাতে পারে, সাবধান করছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক]
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস- ব্যক্তিবিশেষে নিদিষ্ট কোনও কিছুতে অ্যালার্জি থাকলে শরীরের কোনও অঙ্গ সেই অ্যালার্জিপ্রবণ বস্তুর সংস্পর্শে এলে ত্বক চুলকাতে পারে, লাল কিংবা কালোও হয়ে যেতে পারে। যেমন দীর্ঘদিন সিঁদুর লাগালে সেই জায়গায় অ্যালার্জি কিংবা চুলকানি হতে পারে।
এগানথোসিস নিগ্রিক্যান- এটি একটি হরমোনাল অসুখ। এই ধরনের সমস্যা গালের পাশে, গলায় অনুভূমিকভাবে দাগ হয়ে ভাঁজ পড়ে যায়, গলার চামড়া মোটা হয়ে গিয়ে কালো হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বগল, কুঁচকি সহ শরীরের আরও কিছু জায়গায় কালচে ভাব দেখা দিতে পারে।
কীভাবে প্রতিরোধ
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হলে কিছু নির্দিষ্ট জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে। সিঁদুরের জন্য ত্বকে দাগ হলে সিঁদুর না লাগিয়ে বিকল্প অন্য কিছু ব্যবহার করতে পারেন। রোদে বেরোলে সানস্ক্রিন লাগানো উচিত।
ঘরোয়া পদ্ধতি
বাড়িতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ট্যানিং দূর করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নিয়মিত কাঁচা দুধ তুলোয় করে সারা মুখে ৫-৭ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর ১০ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে এরপর অ্যালোভেরা জেলও লাগাতে পারেন। দুধ ও কাঁচা হলুদ মিশিয়ে একটানা লাগালেও উপকার পাওয়া যাবে।
চিকিৎসা
ঠিক কী কারণে সমস্যা হচ্ছে সেটি চিহ্নিত করেই ত্বকের চিকিৎসা করা হয়। কয়েকটি সমস্যায় স্কিন লাইটেনিং ক্রিম লাগানোর পরামর্শ দওয়া হয়। এছাড়া অনেক সময় রোগীকে অন্যান্য মলম ও ওষুধও দেওয়া হতে পারে। হরমোনাল কারণে ত্বকে দাগ-ছোপ হলে এন্ডোক্রিনোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে কেমিক্যাল পিল থেরাপি, লেসার থেরাপি বা অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।