তেলেভাজা খেয়ে জল পান করলেই অম্বল হবে এমন কথা সবার মুখে ঘোরে। এটা মিথ না সত্যি, চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলে, জানালেন নারায়ণ মেমোরিয়াল হাসপাতালের ভিজিটিং গ্যাসট্রোএনটেরোলজিস্ট ডা. অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরলেন মৌমিতা চক্রবর্তী।
জলের গুণ অপরিসীম। পেট ঠিক রাখতে, খাবার হজম করতে জলপান জরুরি। আবার তেলেভাজা বা ডিপ ফ্রাই জাতীয় খাবার খাওয়ার পর বা খেতে খেতে জলপানই বদহজম, গ্যাস ও অম্বলের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ধারণা কতটা ঠিক সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যই প্রমাণ করতে পারে।
ঠিক কোনটা?
খাবার খাওয়ার শুরুতে ঢকঢক করে বা চুমুক দিয়ে অথবা খাওয়ার সবশেষে তৎক্ষণাৎ অনেকটা জলপানের অভ্যাস অনেকেরই রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তেলেভাজা জাতীয় খাবার খাওয়ার পর সেটির গ্যাসট্রিক এম্পটিং অর্থাৎ খাবারটা পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে পৌঁছতে অনেক সময় নেয়। ফলে তেলেভাজার খাবার যেমন চপ, শিঙাড়া প্রভৃতি খেলে বেশ কিছুটা সময় খিদে অনুভূত হয় না। ভাজার সঙ্গে বা পরে জল খেলে হজমশক্তি নষ্ট হয় ও হজমকারক এনজাইমগুলো দ্রবীভূত হয়ে যায়, এমন প্রমাণ বা তথ্য কোনও গবেষণায় পাওয়া যায়নি। এটি মূলত একটি শ্রুতি বা মিথ।
বিশ্বজুড়ে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা মানুষ ও ইঁদুরের ওপর করা হয়েছে কিন্তু ভাজাভুজি খাওয়ার পর জল খেয়ে হজমজনিত সমস্যা হয়, এ তথ্য কোথাও মেলেনি উপরন্তু জল পানের কিছু সুবিধা আছে। যেমন –
- বর্তমান সময়ে ওজন বেড়ে যাওয়া একটি বড় সমস্যা। স্থূল মানুষ যদি খাওয়ার আগে জল খেয়ে নেয় সেই ক্ষেত্রে তার পাকস্থলীর অর্ধেক অংশ জলে পরিপূর্ণ থাকায় খাবার গ্রহণের পরিমাণ কম হয় যা ওজন হ্রাসে সহায়ক।
- বয়স্কদের, বিশেষ করে ষাটোর্ধ্ব মানুষের ক্ষেত্রে খাবার গ্রহণের পর হাইপোটেনশন অর্থাৎ ব্লাড প্রেশার নেমে যায়। কারণ তখন জল শরীরের কোষ থেকে অন্ত্রের মধ্যে চলে আসে। তাই খাওয়ার পর জল খেলে এই বিপদ থেকে সাবধান হওয়া যায় ও প্রেশার সঠিক মাপকাঠিতে থাকে।
- গুরুপাক বা তেলেভাজা খাওয়ার পর হালকা গরম জল খেলে খাবারের মধ্যে উপস্থিত ফ্যাট বা চর্বি খুব সহজেই হজম হয়। সুতরাং একটু গরম জল খাওয়া শরীরের পক্ষে উপকারী।
- তাছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, খাওয়ার পর জল পান সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে একজন মানুষের ইচ্ছা ও রুচির ওপর।
[আরও পড়ুন: শঙ্কা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুর টাইপ ২ স্ট্রেন , বছরের শেষে হু হু করে বাড়তে পারে সংক্রমণ]
জলপানের ভাল দিক-
- তেলেভাজা বা চর্বিযুক্ত খাবারের সঙ্গে জল পান করলে হজমের ক্ষেত্রে অসুবিধার বদলে খানিকটা সুবিধা হয়।
- সাধারণত যে কোনও খাবার প্রধানত তৈলাক্ত খাবার খেলে গলা শুকিয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে জল পান করা যেতেই পারে এবং তার জন্য হজমের সমস্যা হওয়ার কোনও কারণ নেই।
- আবার তৈলাক্ত খাবার পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে পৌঁছতে বেশি সময় নেয় ফলে পাকস্থলী থেকে খাবার ইসোফেগাস বা অন্ননালির উপরে উঠে আসে। সেই কারণে গলা দিয়ে টক জল উঠে আসে, গলা জ্বালা, খাবারে অনিচ্ছা প্রভৃতি উপসর্গ তৈরি হয় কিন্তু সাধারণ খাবারের ক্ষেত্রে তা হয় না।
বলা বাহুল্য, এই সমস্যা খাওয়ার পরে তৎক্ষণাৎ জল খাওয়ার জন্য হয় না। সেটি তৈলাক্ত খাবারে উপস্থিত নিজস্ব কিছু খারাপ উপকরণের জন্য হয়। তাই তেলেভাজা খেয়ে ঈষদুষ্ণ জল খেয়ে নিলে উপরিউক্ত সমস্যা থেকে রেহাই মেলে।
ডাক্তারি পরামর্শে তৈলাক্ত খাবার সর্বদা কম খাওয়াই শ্রেয়। কিন্তু সুস্বাদু ও সহজলভ্য হওয়ায় মানুষের কাছে এর চাহিদা তুঙ্গে। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। জল আমাদের শরীরের কোষগুলোকে সতেজ রেখে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই তেলেভাজা বা নির্দিষ্ট কোনও খাবারের সঙ্গে বা পরে জল পান করলে কখনওই তা জলের কারণে হানিকারক হতে পারে না। জলের গুণাগুণ প্রচুর ও অসামান্য।
প্রয়োজনে ফোন করুন – ০৩৩ ৬৬৪০ ০০০০