জিনিয়া সরকার: সব ওষুধই ফেল। যাদের মাইগ্রেন (Migraine) আছে তারাই বোঝে, যেন মাথায় হাতুড়ি পেটাচ্ছে। নিত্য কী খাচ্ছেন সেটার সঙ্গে কিন্তু এই ব্যথা কমা-বাড়ার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ডায়েটিশিয়ান ডা. ময়ূরী রায় জানালেন কী খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
মাইগ্রেন শুনলে মাথাব্যথা বোঝাই যায়। ফরাসি শব্দ মেগ্রিম শব্দ থেকে এসেছে মাইগ্রেন শব্দটি। চলতি কথায় আমরা বলি আধকপালি, প্রায়ক্ষেত্রেই মাথার একপাশ জুড়ে ব্যথাটা দেখা যায়। এই রোগে মাথাব্যথার সঙ্গে বমিভাব, চোখের যন্ত্রণা, খিদে কমে যাওয়া, আলো ও শব্দ সহ্য করতে না পারা, ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। মাথাব্যথার তীব্রতা, ধরন একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন মাইগ্রেন রোগীদের মস্তিষ্কে ম্যাগনেশিয়াম কম থাকে। আমরা খাবার দিয়ে ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে অনেকটাই মাইগ্রেনের ব্যথাকে কমাতে পারি। দীর্ঘক্ষণ উপোস করলে বা সময়মতো খাদ্যগ্রহণ না করলে এছাড়া অতিরিক্ত চকোলেট, পনির ও বেশি ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার থেকে মাইগ্রেন হতে পারে।
।।যেসব খাবারে বাড়তে পারে।।
খাবারের প্রোটিনের মধ্যে টাইরামিন নামে রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা মস্তিষ্কের রক্তনালির সংকোচন ঘটিয়ে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ায়। টাইরামিন বেশি থাকে পনির, চকোলেট, রেড ওয়াইন, মেটে, সয়াসস, ডিম, কমলালেবু, ডুমুর, কলা, টম্যাটো, কিশমিশ ইত্যাদিতে। এগুলি মাইগ্রেন রোগীরা এড়িয়ে চলতে পারেন বা পরিমাণে কম খাবেন।
ফাস্ট ফুড যেমন ম্যাগি, রোল, পাস্তা, পিৎজা, বিরিয়ানি সব খাবারে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয় যা খাবারকে সুস্বাদু করে তোলে। এদের মধ্যে প্রধান হল আজিনোমোতো। যারা নিয়মিত চাইনিজ ফুড খায় তাদের মাথাব্যথার প্রকোপ বেশি হতে দেখা যায়। এছাড়া দুধ, চা, কফি, সাইট্রাস ফল পনির এগুলো খেলে মাথাব্যথা হয়। রেডমিট, চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছের মাথা, মাছের ডিম, লিভার, কিডনি, ফুল ক্রিমযুক্ত দই, মিষ্টি দই, কনডেন্সড মিল্ক, সয়া মিল্ক, লেবু জাতীয় ফল, আনারস, নারকোলও বেশি খাওয়া যাবে না। কম খেতে হবে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার।
[আরও পড়ুন: বিনা হেলমেটে বাইকে অমিতাভ-অনুষ্কা! তারকাদের আইনি নোটিস পাঠাল মুম্বই পুলিশ]
।।যেগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখে।।
পুষ্টিযুক্ত খাবার যেমন, তাজা শাকসবজি (কুমড়ো, আলু গাজর, ঝিঙে, লাউ সবজি চিচিঙে, করলা), ফল (আপেল, পেঁপে, ন্যাশপাতি, ফুটি, তরমুজ, বেদানা), কম ফ্যাটযুক্ত চিকেন, মাছ গ্রহণ করলে এর প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যে খাবারে ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় যেমন স্যামন ফিশ, ফ্ল্যাক্সসিড, আখরোট, ভুট্টা খেলে ব্যথার উপশম হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল বা জলীয় পদার্থ যেমন স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। ডিহাইড্রেশন হলে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে। সবুজ শাকসবজি, পালংশাক এগুলি ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যা মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া আমন্ড, কুমড়ো বীজ, সূর্যমুখী বীজ, সাদা তিল, কম ফ্যাটযুক্ত প্রোটিন খাবার, দানাশস্য ও ডাল জাতীয় সবুজ দানা ওটস, আটার রুটি, ব্রাউন রাইস, ভুট্টা, কুইনোয়া, খাওয়া যেতে পারে। গ্রিন টি, আদা চা, ক্যামোমাইল চা ব্যথা কমাতে ভাল।
।।খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।।
মাইগ্রেনের সমস্যায় থাকলে খাদ্যাভ্যাসে নজর দিতে হবে, সঙ্গে রোজ ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটা খুবই জরুরি।
বাইরের তৈলাক্ত খাবার, সফট ড্রিঙ্ক যেমন পেপসি, ফ্যানটা, ক্যানড ফ্রুট
জুস, স্যুপ, প্যাকেজড স্যুপ খাওয়া যাবে না।
মাইগ্রেনের প্রকোপ কমাতে অল্প অল্প করে, দু’ঘণ্টা অন্তর খাবার খেতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও কম ফ্যাট যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন, বেশি ঠান্ডা এড়িয়ে চলুন।
যে খাবার খেলে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে সেগুলি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।