স্টাফ রিপোর্টার: ২০১৬ সালেও ছিল সতেরোটা। এখন হল কুড়িটা। নতুন তিনটে অসুখ এল রাজ্যে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় যা ‘নেগলেকটেড ট্রপিকাল ডিজিজ।’ অর্থাৎ সবাই জানে। কিন্তু অবহেলা করে যায়। পেটে কৃমি, গোদ, ডেঙ্গুর মতো অসুখকে আগেই ওই তালিকায় ফেলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নতুন তিনটি অসুখই ছত্রাকজনিত। যা দেখা যায় ত্বকের উপর।
পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘নেগলেকটেড ট্রপিকাল ডিজিজ’ বিভাগের কোঅর্ডিনেটর ডা. প্রীতম রায় জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে নেগলেকটেড ট্রপিকাল ডিজিজের সংখ্যা ২০। কালাজ্বর, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, সাপে কামড় এমন অসুখগুলোকেই নেগলেকটেড ট্রপিকাল ডিজিজ বলা হয়। সাধারণত রাজ্যের নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ এই অসুখগুলোয় আক্রান্ত হন। তাঁর কথায়, “নেগলেকটেড বলার কারণ, গ্রামাঞ্চলের মানুষের এমন অসুখ হলেও চেপে থাকেন। চিকিৎসকের কাছে যান না। কিন্তু তাই বলে থেমে থাকে না মৃত্যু। সমীক্ষা বলছে, ফি-বছর পৃথিবীতে প্রায় হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এমন অসুখে।”
[আরও পড়ুন : ভ্যাকসিন নেই, করোনার বিরুদ্ধে কীভাবে লড়বে শিশুরা? জেনে নিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ]
নতুন যে তিনটি অসুখ তালিকায় এল তা হল মাইসেটোমা, ক্রোমোব্লাসটোমাইকোসিস, ডিপ মাইকোসেস। এগুলির প্রত্যেকটি ছত্রাকজনিত অসুখ। হাত-পায়ের ত্বকের উপর হয়। ডা. প্রীতম রায়ের কথায়, “গ্রামাঞ্চলে অনেকেই খালি পায়ে কাজ করেন। পায়ে কাঁটা জাতীয় কিছু ফুটলে সেই চোট থেকে এই ছত্রাক সংক্রমণ হয়।” তবে এ রাজ্যে এ অসুখ হাতেগোনা বলেই জানিয়েছেন তিনি।
নেগলেকটেড ট্রপিকাল ডিজিজ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি সারা বিশ্বেই চলছে সচেতনতা। এই মুহূর্তে বিশ্বের ১৭০ কোটি মানুষ ‘নেগলেকটেড ট্রপিকাল ডিজিজে’ আক্রান্ত। সকলেই দরিদ্রতম। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, কুষ্ঠ, স্কেবিস, কালাজ্বর তো রয়েছেই, এমন অসুখের মধ্যে রয়েছে পেটে কৃমিও। এ রাজ্যের গ্রামাঞ্চলেও অনেক শিশু কৃমিতে আক্রান্ত। তা ঠেকাতেই এবার পশ্চিমবঙ্গে অভিযান শুরু করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই বিভাগ। গ্রামের ১০০ ব্লককে চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘নেগলেকটেড ট্রপিকাল ডিজিজ’ বিভাগের কোঅর্ডিনেটর ডা. প্রীতম রায় জানিয়েছেন, “ডি ওয়ার্মিং প্রোগ্রাম বন্ধ ছিল। তা আবার চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে গ্রামাঞ্চলের বাচ্চাদের মল পরীক্ষা করে দেখা হবে। তারপর উনিশ বছর পর্যন্ত সকলকেই অ্যালবেনডাজোল ট্যাবলেট বছরে দু’বার করে দেওয়া হবে।”
এ রাজ্যে কালাজ্বর আটকাতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যায় ১ জনের মধ্যে কালাজ্বর আটকে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ১২০টা ব্লককে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৪-তে এই ১২০টা ব্লকে ৬৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন কালাজ্বরে। ২০১৭-তে সেই সংখ্যাই নামিয়ে আনা গিয়েছে মাত্র ১৫৬ জনে। ২০১৯-এ আরও কমে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮৭ জনে।
[আরও পড়ুন : ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসায় বিপ্লব আনছেন বাঙালি কন্যা! মৃত্যুহার কমাবে তাঁর গবেষণা]
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রে খবর, ২০২০-তে কোভিড আবহেও রাজ্যে অনেকটাই কমেছে কালাজ্বরের বাড়বাড়ন্ত। গত বছর মাত্র ৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন কালাজ্বরে। শুধু তাই নয়, শিশুদের মধ্যে কুষ্ঠরোগ ঠেকিয়ে রাখা গিয়েছে গত তিন বছরে। গত ২৮ জানুয়ারি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নেগলেকটেড ট্রপিকাল ডিজিজ নিয়ে তাদের পরবর্তী ১০ বছরের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। যে লক্ষ্যমাত্রায় আগামী ২০৩০-এর মধ্যে কুড়িটি অসুখের মধ্যে অন্তত একটিকে চিরতরে মুছে ফেলার শপথ নেওয়া হয়েছে। মশা-মাছি বাহিত অসুখের ওষুধ গ্রামাঞ্চলেও যাতে সহজে মেলে তার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হু।