সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চূড়ান্ত প্রতিভাবান। কিন্তু ভাগ্যের ছলনা নিত্যসঙ্গী। ‘ট্রাজিক হিরো’দের বোধহয় এটাই নিয়তি। ঠিক যে মুহূর্তে ইতিহাসের মোড় ঘোরানোর সুযোগ সামনে আসে, সে মুহূর্তেই রথের চাকা বসে যায়। যতবড় নায়কই হোক না কেন, সে পরাজয়ের গ্লানি মেনেই ইতিহাস থেকে প্রস্থান করতে হয় তাঁদের। মেসিও তাই করলেন। শতবর্ষের কোপায় হারের পর মাত্র ২৯ বছর বয়সেই দেশের জার্সি তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন এলএম টেন।
ক্লাব ফুটবলে যে ম্যাজিক তিনি দেখান, তাই যেন কোন মন্ত্রবলে উধাও হয়ে যায় দেশের হয়ে মাঠে নেমে। এ অভিযোগ ছিল বরাবরই। বিস্তর সমালোচনাও শুনতে হয়। কিন্তু জবাবটা যেন আর দেওয়া হল না। ফুটবল তাত্ত্বিকরা বলবেন, খেলার এই হেরফের হওয়ার অনেক কিছু ফ্যাক্টর থাকে। থাকে যোগ্য সঙ্গী কিংবা বোঝাপড়ার অভাব। কিন্তু তো তিনি লিওনেল মেসি। দুনিয়াজোড়া ভক্তদের পাহাড়প্রমাণ প্রত্যাশা তাঁর কাঁধেই থাকে তা তাঁর থেকে ভাল আর কে জানে! তিনি জানেন, কোনও অজুহাতের ধুলো তাঁর জার্সির গায়ে লাগতে পারে না। তাঁর ম্যাজিকই সে সব বারবার তুচ্ছ করে দিয়েছে। বীরের বরমাল্য যাঁর জন্য তুলে রাখে পৃথিবী, পরাজয়ের কাঁটার যন্ত্রণাও তাই মেনে নিতে হবে তাঁকেই। সেই হতাশার কেউ সঙ্গী হতে পারে না। মহানায়ক হয়ে ওঠার কথা ছিল যাঁর, ইতিহাস যখন তাঁকে জায়গা দিতে অস্বীকার করে, তখন চুপিসারে চলে যাওয়াই শ্রেয়। পৃথিবীর ইতিহাসে সব ট্র্যাজিক হিরোদের মতোই তাই প্রস্থানের সিদ্ধান্ত মেসির।
দেশের হয়ে ট্রফি না আনতে পারার খরা হয়তো শতবর্ষের কোপাতেই কাটত। শুরু থেকে ছন্দেও ছিলেন। যে মেসি ম্যাজিক দেখতে তাকিয়ে থাকে দুনিয়া, তাও দেখা গিয়েছিল এবার। সুতরাং ভিতরে তিনিও হয়ত আশা করেছিলেন, দেশকে এবার কোপা এনে দিতে পারবেন। কিন্তু চিলির পাওয়ার ফুটবলের কাছে শেষমেশ বোতলবন্দি হয়ে গেলেন। অধিনায়কের দায়িত্ব তো পালন করতে পারলেনই না, উল্টে চাপ এতটাই চড়া ছিল, যে মেসি অসম্ভবের সম্ভাবনাকেও গোলে পরিণত করেছেন, তিনি সামনে থেকে পেনাল্টি মিস করেন। ফুটবল একার খেলা নয়, সব দায় অধিনায়কেরও নয়। তবুও নিজের কাছেই নিজে যেন হার স্বীকার করে নিলেন তিনি। যে ম্যাজিক তাঁর দেখানোর কথা ছিল, তা দেখাতে না পেরেই মাঠ ছাড়লেন জাদুকর। আর এ ব্যর্থতা একটা ম্যাচের নয়, এই নিয়ে চার চারটে ফাইনালে দেশকে তুলেও ট্রফি দিতে পারলেন না। একটা বিশ্বকাপ, তিনটে কোপায় তাঁর ফুটবলভাগ্য প্রসন্ন হয়নি। আর এ পরীক্ষায় নিজেকে ফেলতে চান না তিনি। ইতিহাস থেকে যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় বারবার, তার কাছে একরকম নীরবেই হার স্বীকার করে নিলেন দুনিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। ফাইনালে হারের পর ফুটবল দুনিয়ার আধুনিক ভগবানের চোখে জল দেখেও অনেকে ভাবতে পারেননি এরকম একটা সিদ্ধান্ত
২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে অভিষেক হয় মেসির। তারপর ১১২ বার দেশের হয়ে লড়াই করেছেন। মারাদোনা পরবর্তী আর্জেন্টিনা ফুটবলে তো বটেই, বিশ্ব ফুটবলেও নয়া অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু তা সাফল্যের গাথা হয়ে উঠতে পারেনি। আজ সেই অধ্যায় তাই নিজের হাতেই বন্ধ করে দিলেন তিনি। পরের বিশ্বকাপে তাঁর সতীর্থরা হয়ত অনেকেই খেলবেন, কিন্তু থাকবেন না মেসি। সারা পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীরা যে তাঁর চোখ জুড়নো ফুটবল স্কিল মিস করবে তা বলাই বাহুল্য। মেসি নিজেও কি মিস করবে না? হয়ত দেশের তরফে তাঁকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কথাও বলা হবে। পৃথিবী জুড়ে ভক্তরা তাঁর কাছে এখন প্রত্যাশা করছেন, সিদ্ধান্ত ভেঙে তিনি ফিরে আসুন। সাময়িক হতাশার ওয়াল টপকে তাঁর মাপা সিদ্ধান্তের গোল আরও একবার ফুটবলপ্রেমীদের মুখে হাসি ফোটাক, দুনিয়া জুড়ে প্রত্যাশা এমনটাই। কে জানে ভক্তদের সেই প্রার্থনা মেসি পূরণ করবেন কি না!
The post দেশের হয়ে আর খেলবেন না মেসি appeared first on Sangbad Pratidin.