বুয়েনস আইরেস: বক্তার নাম লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। ইন্টার মায়ামিতে (Inter Miami) যোগ দেওয়ার আগে আর্জেন্টাইন প্রচারমাধ্যমে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন যিনি। যে সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ তুলে দেওয়া হল।
দেশের জার্সিতে খেলা
আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা, আমার কাছে সব সময় স্বপ্নের মতো ছিল। আমি আগেও বলেছি কথাটা। মানছি, দেশের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা সব সময় সুখকর হয়নি। অনেক ঝড়-ঝাপটার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে, আমার পরিবারকে। কখনও কখনও এমন হয়েছে যে, ক্লাব ফুটবলে দারুণ সময় গিয়েছে আমার, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছি। কিন্তু তার পরই দেশের জার্সিতে সম্পূর্ণ অন্য এক অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবু বলব, আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা, দেশের জন্য কিছু করা, সব সময় আমার কাছে অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে। আর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, দেশের জার্সিতে শেষ পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ ট্রফি জিততে পেরেছি আমি। যার নাম বিশ্বকাপ।
অবসর কবে
জানি না। অবসর নেওয়ার সময় যখন আসবে, ঠিকই নিয়ে নেব। আর দেশের হয়ে সব কিছু পেয়ে যাওয়ার পর আমার সামনে একটা জিনিসই এখন পড়ে রয়েছে। তা হল, খেলাকে উপভোগ করা। তবে যুক্তি বিচারে, আমার বয়স বিচারে, খেলার দুনিয়ায় আর খুব বেশি দিন পড়ে নেই আমার। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারব না, আমার অবসরের মুহূর্ত আসবে কবে? আপাতত এক একটা দিন ধরে এগোচ্ছি।
দীর্ঘদিন শিখরে থাকার রহস্য
নাছোড় মানসিকতা বলতে পারেন। ফুটবলের জন্য কম আত্মত্যাগ আমাকে করতে হয়নি। কম পরিশ্রম করতে হয়নি। একদম ছোট থেকে আমি জানতাম, আমি কী হতে চাই। আর নিজের স্বপ্নকে ছুঁতে সর্বস্ব দিয়েছি আমি। কখনও সফল হয়েছি, কখনও আবার ব্যর্থ। কিন্তু প্রতিদিন নিজেকে আরও উন্নত করার লক্ষ্য থেকে কখনও সরে আসিনি। তবে আমি ভাগ্যবান যে, চোট-আঘাত আমাকে খুব বেশি ভোগায়নি।
[আরও পড়ুন: চাঁদের দেশে পাড়ি দিতে প্রস্তুত চন্দ্রযান-৩, ওজন থেকে কার্যপদ্ধতি, জেনে নিন খুঁটিনাটি]
বিশ্বকাপ জয়ের অনুভূতি
ভাষা কিংবা শব্দে বোঝানো কঠিন। আমার নিজের কাছে, আমার পরিবারের কাছে, বন্ধুবান্ধবদের কাছে এর মূল্য বিশাল। আমার জীবনে শুধুমাত্র বিশ্বকাপটাই অধরা ছিল। ওই একটা জিনিসই আমার জীবনে সবচেয়ে আকাঙ্খার ছিল। আর শেষে বুঝেছি, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভিতি ঠিক কী রকম। যে দিন আমি খেলা ছেড়ে দেব, অবসরে চলে যাব, এ সমস্ত ভেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব। বিশ্বজয়ী হওয়া এমন একটা বিষয়, যা গোটা জীবন আপনার সঙ্গে থেকে যাবে। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার মতো ফুটবল পাগল দেশে তো সেটা ইতিহাস হয়ে থেকে যাবে। আর সবাই সেটা মনে রেখে দেবে। চিরস্মরণীয় করে রেখে দেবে।
আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের রহস্য
মূল কারণ, দুর্ধর্ষ একটা দল। একটা শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ টিম ছিল আমাদের। যারা কি না যে কোনও প্রতিকুল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়তে পারত। সৌদি আরবের কাছে হারের পর প্রত্যাবর্তন করা সহজ ছিল না আমাদের পক্ষে। আমরা তার আগে টানা পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশটা ম্যাচ অপরাজিত ছিলাম। কঠিন মুহূর্তে কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করতে হয়, তার আগে জানতাম না আমরা। কারণ, সৌদি আরব ম্যাচের আগে কঠিন পরিস্থিতির মুখে তো পড়তেই হয়নি আমাদের। তা ছাড়া আমাদের টিমে অনেকেই আছে, যারা কি না প্রথম বার বিশ্বকাপ খেলছে। যে কারণে, কাতার বিশ্বকাপের আগে বারবার আমি বলেছি, সৌদি ম্যাচটা কঠিন হবে। কারণ, প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলা কখনওই সহজ হয় না। আপনি চান বা না চান, নার্ভ আপনাকে গ্রাস করবেই। স্নায়ুর চাপ সামলানো অত সহজ নয়। কিন্তু আমাদের টিম শেষে দেখিয়ে দিয়েছিল যে, কিছুতেই ওদের থামানো সম্ভব নয়। প্রমাণ করে দিয়েছিল, কতটা শক্তিশালী ওরা। সৌদি আরব ম্যাচের পর যা বুঝিয়ে দিয়েছিল, আমার টিম।
বিশ্বজয়ী না হলে
আর আমাকে ফুটবল মাঠে দেখতে পেতেন না। কোপা আমেরিকা জেতার পর প্রভূত উত্তরণ হয়েছিল আমাদের টিমের। টিমটা খেলেওছিল দারুণ। আমরা জানতাম যে, যদি আমরা বিশ্বকাপ না জিততে পারি, প্রবল সমালোচনার মধ্যে পড়তে হবে আমাদের। মনে হয় না, বিশ্বকাপ না জিতলে আর আমাকে আপনারা মাঠে দেখতে পেতেন বলে। ফের শূন্য থেকে সব শুরু করার মতো জ্বালানি আর থাকত না আমার।
ইন্টার মায়ামি পর্ব
আমি খুশি এই সিদ্ধান্তটা নিতে পেরে। নতুন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে আমার জন্য। এটুকু বলতে পারি, আমার মানসিকতা বদলাবে না। চিরকাল নিজের সেরাটা দিয়ে এসেছি, দিতে চেয়েছি। এক্ষেত্রেও তাই হবে।