রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: লোকসভা ভোটে (Lok Sabha 2024) বাংলায় বিজেপির ঘোষিত বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভের কথা এবার উঠল কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই। একাধিক প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ মেটাতে বৈঠক করল বিজেপি। আর সেই বৈঠকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনেই বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থাীদের নিয়ে স্থানীয় ক্ষোভ, দলের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবের কথা জানিয়ে সরব হলেন বঙ্গ বিজেপির বিভাগ ও জেলা ইনচার্জরা।
লোকসভা নির্বাচনকে সামনে সংগঠন থেকে প্রচার বিভিন্ন বিষয়ে শুক্রবার সল্টলেকে বিজেপি দপ্তরে দফায় দফায় বৈঠক চলে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল, পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে-সহ দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক ও রাজ্য নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত মোট ৩৮টি আসনে ঘোষিত প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া কি তা জানতে চান কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। সেখানেই দমদম, রায়গঞ্জ, রানাঘাট, মালদহ (উত্তর) ও জয়নগর আসনে প্রার্থীদের নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ ও সমস্যার বিষয়টি উঠে আসে। দমদম লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে শীলভদ্র দত্তকে। এখানে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয় এমন অনেকেই ছিলেন দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের প্রার্থী করা হয়নি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) ঘনিষ্ঠ শীলভদ্রকে প্রার্থী করার পরই দমদম এলাকার বিভিন্ন জায়গায় দলের আদি কর্মীরা পোস্টার দিয়েছেন। সেভ বেঙ্গল বিজেপির তরফে দেওয়া পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘দমদম লোকসভা কেন্দ্র ও বরানগর বিধানসভা কেন্দ্র হাতছাড়া করার চক্রান্তকারী শুভেন্দু অধিকারী’র চাপিয়ে দেওয়া প্রার্থীকে মানছি না, মানব না।’
[আরও পড়ুন: ‘ফিল্মি কেরিয়ার ব্যর্থ, তাই রাজনীতিতে আক্ষেপ মেটাচ্ছে’, হিরণকে তুলোধোনা দেবের!]
বারাসতের প্রার্থী স্বপন মজুমদারকে নিয়ে তো ক্ষোভ চরমে উঠেছে। বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের (Barasat Lok Sabha) বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে দিন দিন দলের অন্দরেই বাড়ছে বিদ্রোহ। প্রার্থীর বিরোধিতায় দলীয় এক নেতার ভিডিও বার্তা, জেলা বিজেপির কার্যালয়ের আশপাশে পোস্টারের পর এবার প্রার্থী স্বপন মজুমদারের বিরুদ্ধে ওঠা মাদক পাচারের অভিযোগ-সহ তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে উপযুক্ত তদন্ত করে সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন বিজেপিরই দুই নেতৃত্ব। এই স্বপন মজুমদারও শুভেন্দুর মনোনীত প্রার্থী বলে খবর। ফলে দমদম ও বারাসতের প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভের বিষয়টি এদিন বৈঠকে বনসল ও মঙ্গল পাণ্ডের সামনে জানান দলের বিভাগ ও ক্লাস্টার ইনচার্জরা। রানাঘাটের প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে নিয়েও দলের অন্দরে ক্ষোভের বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানান বিভাগ ইনচার্জরা।
[আরও পড়ুন: কঙ্গনার অনুপ্রেরণাতেই রাজনীতিতে কৃতী স্যানন? ভোটের মুখে বড় কথা অভিনেত্রীর!]
অন্যদিকে, রায়গঞ্জ থেকে বিদায়ী সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরিকে দক্ষিণ কলকাতায় প্রার্থী করা হয়েছে। রায়গঞ্জেও প্রার্থী হয়েছেন শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ কার্তিক পাল। তাঁকে নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে দলীয়স্তরে। দেবশ্রীকে রায়গঞ্জ থেকে সরিয়ে দক্ষিণ কলকাতায় প্রার্থী করার পিছনে শুভেন্দুর কলকাঠি রয়েছে বলে দলের একাংশের বক্তব্য। এছাড়া, জয়নগরের প্রার্থী অশোক কান্ডারি ও মালদ (দক্ষিণ) কেন্দ্রের প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরিকে নিয়েও দলের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কোথাও আবার স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে নতুন প্রার্থীদের। উল্লেখ্য, প্রার্থী নিয়ে কোন্দল, চলছে বিদ্রোহও। লোকসভা ভোটের আগে কার্যত রাজ্যজুড়েই বঙ্গ বিজেপিতে (BJP) কোন্দল চরমে। পাশাাপশি পছন্দের প্রার্থী করে পুরনোদের সরাতে চেয়ে দলের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছেন বলে অভিযোগ তুলে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও গেরুয়া শিবিরে ক্ষোভ চরমে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রার্থী নিয়ে এদিন দলীয় বৈঠকে দলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া কি তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানতে চান। উত্তরে ক্ষোভের বিষয়টি তুলে ধরেন বিভাগ ও জেলার নেতারা। যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।