সর্বজয়া রায়: অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষা বলছে রাজ্যে তৃণমূলের শক্তিহ্রাস হতে চলেছে। বাংলায় নাকি শাসকদলকে টপকে প্রথম শক্তি হিসাবে উঠে আসবে বিজেপি! জোড়াফুল শিবির অবশ্য এই সমীক্ষা মানতে নারাজ। তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, "এই এক্সিট পোল ফেক, আমরা মানি না।" সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও একপ্রকার চ্যালেঞ্জের সুরে বলে দিয়েছেন, "এক্সিট পোলের সব সমীক্ষা ভুল প্রমাণ করব।" কর্মীদের আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে গণনা পর্বে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
২০১৯ এবং ২০২১-এও বাংলার ফল মেলাতে ব্যর্থ হয়েছিল এক্সিট পোল। সেই যুক্তিতেই এখনও বুথফেরত সমীক্ষা মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। বস্তুত শাসকদলের শীর্ষ নেতারা আত্মবিশ্বাসী, এক্সিট পোল যা-ই বলুক বঙ্গে শাসকদলের আসন বাড়তে চলেছে। শুধু বাড়তে চলেছে বলা ভুল, ভালো অঙ্কে বাড়তে চলেছে। কোথা থেকে আসছে এই আত্মবিশ্বাস? কী এর ভিত্তি? আসলে আর পাঁচটা রাজনৈতিক দলের মতো তৃণমূলের কাছেও জেলাভিত্তিক রিপোর্ট এসেছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যে ফলাফল খুব খারাপ হলেও অন্তত ২৬ আসন জিততে পারে শাসকদল। অর্থাৎ খুব খারাপ ফলাফল হলেও ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি আসন পাচ্ছে তৃণমূল। আরও অন্তত ৬ আসনে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। তবে সেই ছটি আসনও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী এরাজ্যের শাসকদল।
[আরও পড়ুন: লোকসভার তুলনায় ভোটদানের হার অনেক কম বিধানসভা উপনির্বাচনে! কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা]
২০১৯-এ তৃণমূলের ঝুলিতে ২২টি আসন এসেছিল। সেগুলি মূলত দক্ষিণবঙ্গে। উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলে কার্যত শূন্য হয়ে যায় জোড়াফুল শিবির। চব্বিশে এই দুই এলাকাতেই দাঁত ফোটাতে চলেছে শাসকদল। অন্তত দলের অন্দরে জেলা থেকে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী, সেটাই উঠে এসেছে। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের একাধিক আসনে জয়ের জায়গায় রয়েছে জোড়াফুল শিবির। আগেরবার রাজবংশী ভোট একচ্ছত্রভাবে গিয়েছিল বিজেপির দখলে। এবার সেই ভোটব্যাঙ্কে শাসকদল থাবা বসাতে পারে বলে দলীয় সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে। সদ্য জলপাইগুড়ি জেলায় ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে জিতেছে তৃণমূল। উপনির্বাচনের আগে শাসকদল ধুপগুড়িকে মহকুমা ঘোষণা করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হওয়ায় জলপাইগুড়ি আসনে তৃণমূলের সম্ভাবনা উজ্বল হয়েছে। এছাড়াও একাধিক আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তৃণমূল (TMC)।
জঙ্গলমহলে এবার অভাবনীয় সাফল্যের প্রত্যাশায় শাসকদল। দলীয় সমীক্ষা অনুযায়ী, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার মতো আসনে জয়ের জায়গায় আছে তৃণমূল। বাকি আসনগুলিতেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। রাঢ়বঙ্গেও বিজেপির হাত থেকে আসন ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী শাসকদল। আসনসোল, বর্ধমান-দুর্গাপুরে আগেরবার জিতেছিল বিজেপি (BJP)। এই দুটি আসন যে ঘাসফুলে ফিরছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত শাসক শিবির। বীরভূমের দুই আসন নিয়েও শাসক শিবিরে সংশয় নেই। মালদহ এবং মুর্শিদাবাদেও এবার ভালো ফলের আশা করছে শাসক শিবির। তৃণমূলের রিপোর্ট বলছে, ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বরাদ্দ বৃদ্ধি তৃণমূলের পালে হাওয়া লাগিয়েছে। তাছাড়া বিজেপির ভেদাভেদের রাজনীতি আমজনতা পছন্দ করছে না।
[আরও পড়ুন: মুম্বইয়ের রাস্তায় ‘হেনস্তা’র ঘটনায় রবিনার পাশে কঙ্গনা, বড় খবর জানাল পুলিশ]
কলকাতা লাগোয়া সব আসনই জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত তৃণমূল। দলীয় রিপোর্ট বলছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতার সব আসনেই ভালো ভোট হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনাতেও আসন বাড়তে পারে। মতুয়া গড়েও এবার শাসক শিবিরের ভোট বাড়ছে বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে ৩২ আসন পর্যন্ত জিততে পারে তৃণমূল, অন্তত দলীয় রিপোর্টে তেমনটাই দাবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মতে, "সার্বিকভাবে এবার রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে জনমত গিয়েছে। তবে কয়েকটি আসনে সামান্য ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হতে পারে। আপাতত সেগুলির দিকেই আমাদের নজর রয়েছে।"